অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ এএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুয়েট রাজনীতি

প্রশ্নটা যখন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের

প্রশ্নটা যখন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের

সাম্প্রতিক সূচিত বুয়েট আন্দোলন গড়িয়ে বর্তমানে যে অবস্থায় এসেছে, তাকে সংঘাতময় বলা যায়। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের পর ছাত্রদের একাংশ রাজনীতি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। উপাচার্য হাইকোর্টের আদেশ মেনে নিতে তার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। ছাত্রদের অপরাংশ তাদের আগের দাবিতে অটল রয়েছে। তাদের সংখ্যা নাকি ৯৭ শতাংশ। তাহলে কি ৩ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী কেউ কেউ প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছে? এই হুমকি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অতি পুরোনো অপকৌশল। ভাগ্যিস বর্তমানে শেখ হাসিনার শাসন চলছে। তা না হলে হাত কাটা, রগ কাটা থেকে লাশ ফেলানো পর্যন্ত তাদের অতীত কর্মকাণ্ড আবারও চাঙ্গা হতো।

তারা আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার করছেন। আর প্রধানমন্ত্রী চোখ মেলে দেখছেন সে প্রতিষ্ঠানে তার পিতা, জাতির পিতা বা বঙ্গমাতা জন্ম-মৃত্যু দিবস পালিত হয় না। ঠেলায় পড়ে কোনো কোনো জাতীয় দিবস পালিত হয়। তাতে আন্তরিকতা থাকে অনুপস্থিত। উপাচার্য ও প্রশাসনের কিয়দাংশ হয়তো সরকারমুখী, তাদের সংখ্যা এত কম যে, একটু মুখ খুলতেও তাদের জিহ্বা আড়ষ্ট।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশ প্রধানমন্ত্রী বরাবর যে ভাষায় নিবেদন করেছে, তাতে ইতিহাস অচেতন সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিভাত হবে যে তারা দেশপ্রেমিক, বঙ্গবন্ধু প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সাধারণ ছাত্রসমাজ। স্মরণ থাকতে পারে ছাত্রলীগ এই সাধারণ ছাত্রসমাজ নামধারীদের শিবিরের অন্য নাম বলে চিহ্নিত করেছে। তাদের শতভাগও যদি একত্র হয়ে ঘোষণা দেয় যে, তারা ছাত্ররাজনীতি চায় না তাহলে গণতান্ত্রিক ধারা মেনেও হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখতে হবে, যদিও উপাচার্য এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার চাপে রয়েছেন। কেননা গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাও আছে। গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে একটা গল্প বললে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। গল্পটি নিম্নরূপ—

আমেরিকানদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা সর্বজনীন। স্কুলশিশুদের মধ্যেও তা পরিব্যাপ্ত। একবার তারা শুনল যে স্কুলের পাশে কোনো এক বাড়িতে একটা শিশু জন্ম নিয়েছে। জন্মলাভ করা শিশুটি নিয়ে কেউ বলল এটি ছেলে আর কেউ বলল মেয়ে। বিতর্কের একপর্যায়ে একজন বলল, চলো আমরা ভোটাভুটি করি, শিশুটি ছেলে কি মেয়ে। ভোটে নির্ধারিত হলো যে শিশুটি ছেলেশিশু। তারা পাশের বাড়িতে হাজির হয়ে জানল যে শিশুটি ছেলে না, মেয়ে। আমাদের বুয়েটের এই ভোটারদের ও তাদের পূর্বসূরিদের অভিব্যক্তি এমনভাবে নির্ণীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদিও একজন সাবেক শিক্ষক বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ফায়দা বর্ণনা করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধু হয়তো কস্মিনকালেও ভাবেননি যে রাজনীতিমুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হারে সিভিল সার্ভিসের দিকে ঝুঁকবে কিংবা ব্যাপকভাবে দেশ ত্যাগ করে বিদেশে বসেও মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়ন করবে। তিনি হয়তো আরও ভাবেননি তার আদর্শ ও চেতনা ধর্মের ছদ্মাবরণে চ্যালেঞ্জ করা হবে, ধর্মের নামে ওয়াহিবীবাদ, সালাফী বাবদ, হিযবুত তাহরীর আখড়া হবে বুয়েট।

একজন সাবেক শিক্ষক যখন বলেন যে বুয়েটে সব শিক্ষার্থী ও অধিকাংশ শিক্ষক ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে, তখন আমার বলতে ইচ্ছে করছে তারা কি রাজনীতি বিমুক্ত? আমার তো মনে হয় নিরপেক্ষ ছাত্রসমাজ মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ছাত্র আর নিরপেক্ষ শিক্ষক মানে প্রকাশ্য বা তলে তলে তাদের উসকে দেওয়া শিক্ষকবৃন্দ। এসব শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও তাদের আদর্শ প্রচারে থেমে থাকেননি। অতীতে অন্তত দুটো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা আখড়া গেড়েছিল। নিবিড় প্রচেষ্টায় সেগুলো ভেঙে পড়েছে। দেশের ৯৭ শতাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষে। তার বিপরীতে কোনো বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৭ ভাগ যখন সে চেতনার বিপক্ষে তখন সেখানে ক্র্যাকডাউন অত্যাবশ্যক।

এখন বুয়েটের বিষয়টা ছাত্ররাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ পর্যায়ে। এখন কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা যদি একুনে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে যাব, তাহলে সে সিদ্ধান্ত বলপ্রয়োগে প্রতিহত করা সরকারের নৈতিক, মানবিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি। একটি বদ্ধ আবহে বা আঙিনায় কোনো গোষ্ঠীর অসাবধানতা বা অবিমৃশ্যকারিতায় অপরাজনীতি বর্ধিত হয়ে ২০১৯ সালে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এটা পাপে রূপান্তরিত হয়েছে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, তারাও মেধাবী ছিল। তাতেও যদি তাদের উত্তরসূরিদের সম্বিত না ফেরে, তাহলে চরমপন্থা আবশ্যক। তুহিন নামক ছাত্রটিও মেধাবী ছিল। তার বিচার আজও নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। বুয়েটে নিরপেক্ষ শিক্ষার্থী ও নিরপেক্ষ বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক শিক্ষকদের কজন সে ব্যাপারে মুখ খুলেছেন? গত চার বছরে যদি বুয়েটকে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র, হিযবুত তাহরীর ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে শিবির কবজা করে অভয়ারণ্য বানিয়েছে বলি, তাহলে আমার ভুল প্রমাণের জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিবেশ দূষণ / টায়ার গলিয়ে তেল উৎপাদন

ছাত্রের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা

ছায়ানট মিলনায়তনে রবীন্দ্রসন্ধ্যা

‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যবসায় মানোন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার’

নানা আয়োজনে ‘বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড সেন্ট দিবস’ পালিত

ফের বন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন ছালিমা হোসেন

ভাত রান্না করতে গিয়ে প্রাণ গেল গৃহবধূর

বিয়ের দাবিতে জুয়েলের বাড়িতে ২ সন্তানের জননীর অনশন

অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ

এইডস ছড়িয়ে দিতে বহুজনের সঙ্গে যৌনকর্ম, অতঃপর...

১০

২ হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

১১

সিএনজিতে ধর্ষণের অভিযোগ, অতঃপর...

১২

৩৪০ টাকার জন্য লাথি মেরে গর্ভের সন্তান হত্যা

১৩

রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব এবং অধ্যাপক লাইসা

১৪

ইউরোপীয় স্টাইলে ভিসা আনছে আরব দেশগুলো

১৫

অর্থনীতি উত্তরণে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান

১৬

চুরির অপবাদে তিন শিশুকে ট্রাক্টরচাপা দিয়ে মারার চেষ্টা

১৭

ধর্ষণ ও ভ্রূণ হত্যা মামলায় সেই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

১৮

পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হলেন ৭ কর্মকর্তা

১৯

দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল 

২০
X