আরও একবার তীরে এসে ডুবল তরী—ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ প্রস্তুত করে শেষ মুহূর্তের গোলে হারল বাংলাদেশ। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচের পর চলছে পোস্টমর্টেম। ম্যাচে ইতিবাচক দিক ছিল, ছিল নেতিবাচক নানা দিকও। এসব নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক তিন ফুটবলার—জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু, মাসুদ পারভেজ কায়সার ও জাহিদ হাসান এমিলি। তিন সাবেক ফুটবলারের বিশ্লেষণ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।
জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু
আমাদের শুধূ কোচ সমস্যা নয়, সমস্যা আসলে হাজারটা। মার্কিং পজিশনে ডিফেন্ডারের স্টান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় গোলে সাদ উদ্দিনের স্টান্স ঠিক ছিল না। সে গ্যাপ ক্লোজ না করে সময় দিয়েছে। দ্বিতীয় গোলে সোহেল রানা পাস দিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে বল তুলে দেওয়ার পর কী করার থাকে! ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ওভাবে হেড করে গোলমুখে বল ফেললে হোসে মরিনহো কিংবা পেপ গার্দিওলা কোচ থাকলেও কিছু করার থাকবে না। দল নির্বাচনেও ভুল ছিল—চোটগ্রস্ত সেন্টারব্যাককে কেন স্কোয়াডে রাখা হবে! বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না একাদশ নির্বাচনও। এভাবে সব ক্ষেত্রে ভুল করলে মাশুল দিতে হয়, বাংলাদেশও দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও আমি দেখিনি ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই উদযাপন করা হয়। ইতিবাচক দিক ছিল, ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় জামাল, সামিত ও ফাহমিদুল নামার পর প্রেসার দেওয়া। জায়ানের খেলাটাও দারুণ ইতিবাচক ছিল। সে যখন ক্রস করছিল, তা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছিল। জামালের সেটপিস কার্যকর। সেটপিস থেকে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করা গেছে, গোলের উৎসও ছিল মোরসালিনের সেটপিস।
মাসুদ পারভেজ কায়সার
অসাধারণ কামব্যাক—৩-১ থেকে ৩-৩। খেলোয়াড়দের ডেডিকেশন, মানসিকতা ছিল দারুণ। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মোটেও সহজ কাজ নয়। এটা সত্যিই অসাধারণ ছিল। বাংলাদেশ ফুটবলে সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। টেকটিক্যাল ডিসিপ্লিন নির্দিষ্ট কোনো সময়ের জন্য নয়, এটা শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত ধরে রাখতে হয়। এ জায়গায় আমাদের ঝামেলা আছে, ইমপ্রুভ করতে হবে। ভুল দুই দলই করেছে। চতুর্থ গোল হজম না করলে কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটা হংকং চায়নাকে নিয়ে হতো। কারণ ভুল তারাও করেছে। তিন গোলের পেছনেই তাদের ভুল ছিল। এখানে আসলে কোচ কিংবা নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ আমাদের গোটা ফুটবল সিস্টেমের। সেখানে মেরামত করতে না পারলে এভাবেই চলতে থাকবে—কালেভদ্রে একটা জয় আসবে, বাকি সময় শুধুই হতাশা। একাডেমিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাচ্চা বয়স থেকেই আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে ফুটবলে উন্নতি করা অসম্ভব। মানসিকতা, ম্যাচ কৌশল, নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া সর্বোপরি কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার মতো বিষয়গুলো সেখান থেকেই শিখিয়ে আনতে হবে।
জাহিদ হাসান এমিলি
প্রথমে ম্যাচের ইতিবাচক দিক নিয়েই বলতে চাই যে, বাংলাদেশের এমন ম্যাচ আমরা খুব বেশি দেখিনি; যেখানে ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে যাওয়ার পর ৩-৩ করা গেছে। লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সেটা বাংলাদেশ করেছে, যা ছিল অসাধারণ। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ২-২ করেছিল বাংলাদেশ। যদিও পরে ম্যাচটা হারতে হয়েছিল।
ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে কোচিং স্টাফদের ওভাবে উদযাপনে যোগ দেওয়া ছিল দৃষ্টিকটু। ওই অবস্থায় উচিত ছিল এটা নিশ্চিত করা যে, আমরা গোল হজম করব না। প্রতিপক্ষ দল যেহেতু চাপে, বাংলাদেশের চার নম্বর গোলের জন্য চেষ্টা করাটাই বরং সঠিক সিদ্ধান্ত হতো। ম্যাচের কোন মুহূর্তে আপনার কৌশল কী হবে, এটা নির্ধারণ করবেন কোচ। পেশাদার দলগুলোর ক্ষেত্রে আমরা দেখি, আপনি যখন চাপে থাকবেন আপনাকে আরও চাপে রাখবে বিপক্ষ দল। হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচে আমরা সেটা করতে পারিনি। ম্যাচে অনেক ব্যক্তিগত ভুল ছিল। এভাবে ভুলের পর ভুল করলে আসলে আপনার লক্ষ্য পৌঁছানোর কাজটা কঠিন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একই ভুল বারবার না করা।
মন্তব্য করুন