

রুবেন দিয়াস ও বের্নার্দো সিলভা ম্যানচেস্টার সিটিতে অসাধারণ খেলছেন। গঞ্জালো রামোস ও জোয়াও নেভেস পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের সদস্য। দারুণ সম্ভাবনাময় উদীয়মান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ইউরোপে থিতু হতে না পারা জোয়াও ফেলিক্স খেলছেন সৌদি আরবে। পাঁচজনের শিকড়ই বেনফিকা একাডেমি, যার নাম ‘বেনফিকা ক্যাম্পাস’।
ওপরের তথ্য দিয়েও কিন্তু পর্তুগিজ ক্লাবটির যুব কার্যক্রমের মুনশিয়ানা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। এজন্য অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী পর্তুগিজ দলটির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। শিরোপা জয়ী পর্তুগালের ছিল বেনফিকা একাডেমি দিয়ে উঠে আসা ৯ জন ফুটবলার। ২০২৪ সালে ক্লাবের একাডেমিতে যোগ দেওয়া উইঙ্গার জ্যাডেন উমেহ বিশ্বকাপে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
চলুন আরেকটু গভীরে যাই—গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআইইএস প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, বেনফিকার একাডেমি পৃথিবীর সবচেয়ে উৎপাদনশীল। যা স্পেনের বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া এবং আর্জেন্টিনার রিভার প্লেটের রিভার ক্যাম্পকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছে। বেনফিকা একাডেমির সিঁড়ি বেয়ে আসা ৯৩ জন খেলোয়াড় বর্তমানে পেশাদার পর্যায়ে সক্রিয়।
বেনফিকার একাডেমি পরিচালক গুইলহেরমে মুলার এবং তার কর্মীদের কার্যক্রমের গভীরতা কিন্তু এখনো পরিষ্কার হয়নি। এজন্য যেতে হবে আরও ভেতরে। ক্লাবটির একাডেমি কার্যক্রমে থাকা শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চ শিক্ষাগত সাফল্যের হার বজায় রাখতে পারেন এবং খেলার পাশাপাশি সমাজেও অবদান রাখতে পারেন—বেনফিকা ক্যাম্পাসে সে দিকটায় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। যার লক্ষ্য ‘ভালো, ভদ্র নাগরিক’ তৈরি করা।
পর্তুগালের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জয় বেনফিকার জন্য একটি দারুণ বিজ্ঞাপন ছিল। এ প্রসঙ্গে একাডেমি পরিচালক মুলার বলছিলেন, ‘এটি পর্তুগিজ ফুটবলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমাদের দেশ প্রতিভা তৈরি করে চলেছে। ক্লাবগুলোর শক্তিশালী বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া আমাদের প্রশিক্ষণ মডেলের সাফল্যের একটি স্পষ্ট প্রদর্শন এটি। আমি খেলোয়াড়দের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা বিশ্বকাপ দলের অংশ ছিলেন।’
সদ্যই বিশ্বকাপ জেতা তরুণদের সামনে কিন্তু এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ, সেটা সিনিয়র দলে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। বেনফিকার বর্তমান কোচ হোসে মরিনহো অবশ্য একাডেমি স্নাতকদের জন্য মোটেও আদর্শ নন। একাডেমির একঝাঁক তরুণ পর্তুগালকে বিশ্বকাপ জেতানোর পর এ কোচ তাদের সিনিয়র দলে যুক্ত করার চেয়ে বরং ৩৩ বছর বয়সী ফিলিপ কস্তিচকে দলভুক্ত করতে বেশি আগ্রহী!
মরিনহো নিজ ঘরে বেড়ে ওঠা প্রতিভার চেয়ে নিজের চেনাজানা প্রতিষ্ঠিতদের ওপর আস্থা রাখার জন্য সুপরিচিত। সাবেক চেলসি মিডফিল্ডার রুবেন লফটাস-চিকের কথায় অবশ্য সিনিয়র দলের দুয়ারে কড়া নাড়া ফুটবলাররা স্বস্তি পেতে পারেন, ‘এই তরুণদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়, মরিনহো সম্ভবত এমন দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে থাকবেন না; যাতে এটি খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করতে পারে।’
বেনফিকা ক্যাম্পাস বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ মাঠ, ফিটনেস সেন্টার, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সুবিধা এবং খেলোয়াড়দের জন্য শিক্ষাগত সহায়তা একত্রিত করেছে, যা অল্প বয়স থেকেই ফুটবলারদের লালন করার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। এই কৌশলগত পদ্ধতির ফলস্বরূপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিত্তাকর্ষক সাফল্যও এসেছে।
একাডেমির পণ্য জোয়াও ফেলিক্সকে ২০১৯ সালে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ১২৬ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কিনে নিয়েছিল। অঙ্কটা ক্যাম্পাসের অবকাঠামোতে বেনফিকার করা সম্পূর্ণ বিনিয়োগের চেয়ে বেশি ছিল! এমন উদাহরণ বেনফিকার পাশাপাশি স্পোর্টিং লিসবন ও এফসি পোর্তোকে তরুণ প্রতিভার পেছনে আরও বেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেছে। ফলে পর্তুগাল এখন ফুটবলার রপ্তানির বড় বাজার, যা দেশটির ফুটবল ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করেছে।
মন্তব্য করুন