টিম হোটেলে বসে অনুশীলনটা দারুণ করেছেন নিক পোথাস। সে কারণেই সংবাদ সম্মেলনে ছোড়া একের পর এক গুগলি, স্টোক ডেলিভারি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটে লাগিয়েছেন তিনি।
মাঠে লিটন দাস-নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য হতাশার হলেও দলের সহকারী কোচের সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা জবাবগুলোতে তাদের ওপর নিশ্চিত স্বস্তির হওয়া বইবে। দশ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে মাঠের বাইরের বিতর্ক ও মাঠের পারফরম্যান্স নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বিতর্কিত প্রশ্নকে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন; মাঠের ব্যর্থতাকে সাময়িক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। খেলেছেন ‘আক্রমণই সেরা রক্ষণাত্মক কৌশল’—এই পদ্ধতিতে।
সেইসঙ্গে দুই ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেটারদের যোগ্যতার মূল্যায়ন না করার কথা শুনিয়েছেন এ প্রোটিয়া কোচ।
পরপর দুই ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতা। এক ম্যাচ থাকতেই আফগানিস্তানদের কাছে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন ধ্রুবদের ব্যাটিং আপ দু দ্য মার্ক ছিল না। আফগান স্পিনার রশিদ খান, মুজিবউর রহমানদের ঘূর্ণিতে বেসামাল তাদের পারফরম্যান্স।
এসবে অবশ্য বিচলিত নন পোথাস। লিটন-শান্তদের পেশাদারিত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘আমরা পেশাদার ক্রিকেটারদের ব্যাপারে কথা বলছি। নিজেদের কাজ সম্পর্কে তারা খুবই পেশাদার। আমাদের তরফ থেকে খুব বেশি অনুপ্রাণিত করতে হয় না। তারা সবসময় প্রস্তুত। এটি দারুণ খেলোয়াড়দের দল।’ লিটনরা রান করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পোথাস। তবে ভারত সিরিজ থেকে পরিসংখ্যানে চোখ দিলে কিছুটা অস্বস্তিও থাকবে বাংলাদেশের। বিশেষ করে ব্যক্তিগত কিছু সাফল্য ছাড়া সর্বশেষ কয়েক সিরিজে দলীয় ব্যাটিং ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতোই। কোনো সিরিজে মেহেদী হাসান মিরাজ, কোনো সিরিজে মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত বা তাওহীদ হৃদয়—এভাবেই সাফল্য এসেছে। দলীয় পারফরম্যান্সের কথা বললে ব্যাটিংয়ে সেটা অতীত হতে চলছে।
আর সে অতীতকে মনে রাখতে বললেন পোথাস, ‘আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাচ্ছি যে, ইংল্যান্ড (আসলে ২-১ ব্যবধানে হার), ভারত, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এত দ্রুতই ভুলে না যাই। আমরা বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের শুধু দুই ম্যাচের ওপর মূল্যায়ন করছি। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, মূল্যায়ন করার সময় যেন লম্বা সময় বিবেচনায় নেই।’ মূল্যায়ন শুধু আফগানিস্তান, তেমনও কিন্তু না। তবে আফগান স্পিনের সামনে তো এ সিরিজে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। তিন স্পিনার মিলে প্রথম ম্যাচে পাঁচ ব্যাটার ও দ্বিতীয়টিতে নেন ৬টি। অর্থাৎ দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ১৯ উইকেটের ১১টিই নিয়েছেন আফগান স্পিনাররা। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দুটি ফিফটি ছাড়া কোনো পড়ার মতো ব্যাটিং করতে পারেননি কেউই।
পোথাসের চোখে আফগানদের স্পিন শক্তিই এগিয়ে, ‘ওদের স্পিন আক্রমণ বিশ্বসেরা, এটাই বাস্তবতা। ওদের তিনজনই অনেক সাদা বলের ক্রিকেট খেলেছে। এমন বোলিং আক্রমণ যে কোনো অধিনায়কের স্বপ্ন।’ তবে সামনের তিন মাসে হতে যাওয়া দুই টুর্নামেন্টের আগে এমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলতে পারাকে ইতিবাচকতা দেখছেন তিনি, ‘কৌশলগতভাবে ওরা আমাদের যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে, সেটা বরং আমাদের জন্য সুবিধাই। এটা আমাদের খেলায় উন্নতি আনবে। এই মানের স্পিন খেলতে পারলে সব ধরনের স্পিন খেলতে পারবেন।’ সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ। দুই টুর্নামেন্টেই বিশ্বসেরা স্পিনারদের সামলাতে হবে লিটন-শান্তদের। কতটা প্রস্তুত হয়েছেন তারা, সেটা সময়ই বলে দেবে।
মন্তব্য করুন