ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের অনুসন্ধান কেন্দ্রে দিনে যত মানুষ তথ্য জানতে আসেন এর একটি অংশের প্রশ্ন, কবে থেকে চালু হচ্ছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। জবাব না পেয়ে প্রতিদিন ফিরে যান আন্তঃদেশীয় এই ট্রেনের বহু যাত্রী। তেমনি স্টেশনের কাউন্টারও বন্ধ দীর্ঘদিন। সেখানেও কেউ আর দায়িত্ব পালন করছেন না।
প্রায় দুই মাস ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল বন্ধ আন্তঃদেশীয় তিন ট্রেনের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ট্রেন চালাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ট্রেন পরিচালনা করছে না সে দেশের কর্তৃপক্ষ। কবে থেকে আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল করবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের আন্তঃদেশীয় রেল চলাচলের তিনটি পথেই নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে ট্রেন চালাতে সম্মতি দিচ্ছে না ভারত। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে চলমান যাত্রীবাহী তিন ট্রেন বন্ধ, সেখানে রাজশাহী-কলকাতা নতুন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়টি কোনো আলোচনাতে নেই।
দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, যাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ায় ভারতে যাওয়ার জন্য ট্রেনকেই প্রাধান্য দিতেন তারা। এখন ট্রেন না থাকায় অনেকটা বিপাকে তারা। এমন বাস্তবতায় দ্রুত এই ট্রেন চালুর দাবি তাদের।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রেন চলাচলের কথা বলা হলেও ভারতের দিক থেকে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ট্রেন কবে থেকে চলতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, ট্রেন চালুর বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তারিখ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যাতায়াত সহজ করতে তিন রুটে ট্রেন পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে কলকাতা, মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি এবং বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে কলকাতা রুটে চলাচল করত।
তিনটি ট্রেনের মধ্যে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা-কলকাতা রুটে চালু করা হয় মৈত্রী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সপ্তাহে চার দিন বুধ, শুক্র, শনি ও রোববার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সকাল সোয়া ৮টায় ছেড়ে কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছাত বিকেল ৪টায়। কলকাতা থেকেও সপ্তাহে চার দিন সোম,
মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেত।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটির রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনই তারা এই ট্রেন সেবা চালু করতে চাইছেন না। তারা বলছেন, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, সড়কপথেও বাস চলাচল করছে। কিন্তু ট্রেনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ভারত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই সড়কপথে যাত্রী যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন সীমিত পরিসরে চলমান থাকলেও রেলপথে যাত্রী, পণ্য পরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ২৫ জুলাই থেকে সড়কপথে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী চলাচল। এরপর গত ১৯ আগস্ট দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন বিভাগের এক চিঠির বিপরীতে পণ্যবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে অনুমতি দেয় ভারত। ওই রাতেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনাপত্তি পায় বাংলাদেশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার কালবেলাকে বলেন, অনেক যাত্রী এসে মৈত্রী ট্রেন সম্পর্কে জানতে চান। বিশেষ করে ঢাকা থেকে কলকাতাগামী যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কবে থেকে ট্রেন চলবে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।