রাজধানীতে শীত জেঁকে বসার আগেই বাজারগুলোতে শোভা পাচ্ছে মৌসুমি সবজি। বেড়েছে এর সরবরাহও। এর পরও বেশিরভাগ সবজির তুলনামূলক দাম কমেনি। এতে হাতের নাগালে পেয়েও চড়া দামের কারণে এসব সবজি কিনতে পারছেন না অনেকেই। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়াকে দায়ী করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পলাশী, নিউমার্কেট কাঁচা বাজার, জিগাতলা, কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় শিম, মুলা, বেগুনসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শীত বেশি এলে আরও কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।
গত সপ্তাহের ১০০ টাকার শিম ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ৬০ টাকার মুলা ৫০, শালগম ২০ টাকা কমে ১০০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা টমেটো ১০ টাকা কমে ১৫০, দেশি টমেটো ২০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০, কম ঝাঁজালো কাঁচামরিচ ১২০, গোল বেগুন ১০ টাকা কমে ১০০, লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো পেঁপে ৫০, গাজর ১৫০, করলা ৮০ থেকে ১০০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০, মিষ্টি কুমড়া ও পটোল ৬০ ও ৮০ টাকা, কচুরমুখী ২০ টাকা বেড়ে ১০০, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, ধুন্দল ও শশা প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লেবুর হালি ১৫ থেকে ২৪ টাকা, পুঁইশাক ৩৫, পালং, লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
পলাশী বাজারের সবজি বিক্রেতা তানভির কালবেলাকে বলেন, শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে শিম, বেগুন, কপি ও মুলার দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে কচুরমুখীর দাম বেড়েছে। তবে আশা করা যায়, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
সরকারি চাকরিজীবী তবিবুর রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা। নিউমার্কেটে বাজার করতে এসে তিনি কালবেলাকে বলেন, এক মাস ধরে বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। ভেবেছিলাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে সব সবজি চলে আসবে; কিন্তু দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ নাগালের বাইরে।
এনবিআরের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত সপ্তাহে ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও সেই চিত্র কোথাও দেখা যায়নি। খোলাবাজারে প্রতি লিটার পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে অপরিবর্তিত ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা লিটার, ৫ লিটারের সয়াবিন ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা।
এদিকে শুল্ক ছাড়ের এক মাস পর কমতে শুরু করেছে চিনি ও ডিমের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯ কোটি ডিম আমদানির খবরে ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি চিনি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিম আমদানির পর থেকে আড়ত মালিকরা কমদামে ডিম বিক্রি করতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে চিনির আমদানিতে শুল্ক কমানোয় মিলে চিনির দাম কমেছে। ফলে বাজারেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে ১৩০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও ৫ টাকা কমেছে এ পণ্যের দাম। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২৫ এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তবে নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কমেনি এ পণ্যটির। আগের মতো পুরান আলু ৭৫-৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি নতুন আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন পাইজাম ও আটাশ চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে না আসায় বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ অপরিবর্তিত দামেই, প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ এবং হালি ৮০ টাকা। এ ছাড়া গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকা।
মাছ বিক্রেতা নুরুল হক বলেন, মাছের বাজার প্রতি সপ্তাহে বাড়ে আবার কমে। আজ ২০ টাকা কমলে, সামনের বাজারে ৩০ টাকা বাড়ে। কাঁচামালের বাজার দিয়ে কোনো ভরসা নেই, তবে তেলাপিয়া, সিলভার ও পাঙাশ মাছ দুইশ টাকার মধ্যে থাকলে মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কিনতে সুবিধা হয়।