পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন ছেড়ে অবশেষে নতুন ভবন পাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের আটটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এরই মধ্যে চারটি ভবনের দরপত্র (টেন্ডার) প্রক্রিয়া শেষে দুটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাকি চারটি ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ ভবনগুলো নির্মাণের কথা রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণ হলে সরকারি স্কুলের শ্রেণিকক্ষের সংকট অনেকাংশে কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে যথাসময়ে জায়গা না পাওয়ায় বাতিল হয়ে গেছে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণের সম্ভাবনা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মেগা প্রকল্পে রয়েছে ৩২০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের বড় প্রকল্পও। এর আওতায় প্রত্যেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রকল্পের ডিপিপি এবং নকশা চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে) পাস করা হয়। পরে মেট্রোপলিটন এলাকার সরকারি স্কুলগুলোতে ছয়তলার পরিবর্তে ১০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। শুরুতে বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, নতুন অবকাঠামো নির্মাণের মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর আটটি সরকারি স্কুল। এর মধ্যে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলা করে ভবন নির্মিত হবে। বাকি ছয়টি স্কুলে নির্মিত হবে ছয়তলা ভবন। এই ছয় স্কুলের মধ্যে রয়েছে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজিয়েট স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ তলা ভবনে দুটি লিফট এবং দুটি সিঁড়িসহ প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ক্লাসরুম থাকবে। তা ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে প্রকল্পভুক্ত সব স্কুলে।
নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহমান বলেন, নতুন ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা পাবে। ইনডোর গেম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, হলরুম, লাইব্রেরিসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সরকারি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের যে সংকট, তা-ও দূর হবে।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে আমাদের বিদ্যালয়ের অবস্থান। ছাত্রদের তুলনায় আমাদের ক্লাসরুম খুবই অপ্রতুল। এমন একটি ভবন আমাদের খুবই দরকার ছিল। যেহেতু এই ভবনটি আধুনিক সুবিধা-সংবলিত; তাই আমাদের অনেক উপকার হবে।
বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এসফাক বলেন, এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কারণ শিক্ষার গুণগত মানের জন্য পরিবেশ বা সুন্দর ভবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করতে পারে। তাই আমরা মনে করি, এই প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, ততই সবার জন্য মঙ্গল।
জমি সংকটের কারণে বরাদ্দ বাতিল হওয়া চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবনের সংকটে বর্তমানে কষ্ট করেই পড়ালেখা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক উম্মে কাউসার। কালবেলাকে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের একটা ভবনের খুব দরকার। আমাদের স্কুলে এতটাই রুমের সংকট, এসএসসি পরীক্ষার সময় একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর বসার জায়গা দিতে পারি না। বিদ্যালয়ের সামনের টিনশেড ভবন ভেঙে এখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা যেত। করার কথাও একবার শুনেছিলাম। কিন্তু কোথায়, বরাদ্দের কোনো খবরও পেলাম না। পাশের স্কুলগুলো বরাদ্দ পাচ্ছে, আমাদেরটা কেন বাদ যাবে বুঝতে পারছি না।
জায়গা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, জায়গা সংকট কিংবা জায়গা ব্যবস্থা করতে পারিনি—এমন কোনো তথ্যই আমরা শিক্ষা প্রকৌশল চট্টগ্রামকে জানাইনি। আমি চলতি বছরে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছি। কিন্তু আমি এই বিদ্যালয়ে ২৬ বছর দায়িত্ব পালন করছি। এর আগের প্রধান শিক্ষক বলেছেন কি না, তা-ও জানি না। বলার তো প্রশ্নই আসে না। কারণ আমার বিদ্যালয়ের সামনের টিনশেড ভাঙলেই জায়গার সংকট দূর হয়ে যাবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল হাসান খান বলেন, এই প্রকল্পে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের ৯টি সরকারি বিদ্যালয় থাকলেও পরবর্তী সময়ে জমি জটিলতায় চট্টগ্রাম সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়। এটি ছাড়া বাকি আটটি বিদ্যালয়ের মধ্যে চারটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল আহাসান বলেন, যথাসময়ে জায়গা না পাওয়ায় চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়। আটটি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সিটি গার্লস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া হাজী মুহাম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জায়গাটি পাহাড়ের পাদদেশে হওয়ায় ভবনের নকশা পরিবর্তন করে বিশেষ নকশার জন্য পাঠানো হয়েছে। মুসলিম হাইস্কুলের পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করতে হবে। বাকি চারটি ভবন নির্মাণে টেন্ডার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।