বীর সাহাবী
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৭ এএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক

যুক্তরাষ্ট্রে খুলতে পারে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে খুলতে পারে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়া পর দেশটিতে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যার কারণ ট্যারিফ বা শুল্কনীতি নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা। ক্ষমতা গ্রহণের আগেই চীন এবং প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জানিয়েছেন ট্রাম্প, যা সুযোগ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। নির্বাচনী প্রচারেও তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানি পণ্যে ১০ বা ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশও হতে পারে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির ফলে আলোচিত দেশগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে ভাটা পড়বে, যে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে কিছু বাধাও পেরোতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে তৈরি পোশাক, যার মূল্য ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার এবং এটি দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ হলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া ও হালকা শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে, যা রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক অবদান রাখবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ কমাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারে, যা কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির বিকাশ ত্বরান্বিত করবে। চীনের ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পোষাতে আমরা চীন থেকে যেসব কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি করি, তার মূল্য বৃদ্ধি করলে চীনের কাঁচামালনির্ভর শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প কাঁচামাল সরবরাহ চেইন খুঁজে বের করা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক নীতি ও কৌশল গ্রহণ করলে এই সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করা সম্ভব।’

জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের যে ক্রয়াদেশগুলো মেক্সিকোতে চলে গিয়েছিল, সেগুলো ফেরত আসার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করছে। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মেক্সিকোর পোশাকের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে। কারণ তুলনামূলকভাবে কম খরচে উচ্চমানের পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে সুপরিচিত।’

এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সাপ্লাই চেইনে কোনো প্রকার ঝুঁকি যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা (এফটিএ) এবং রপ্তানি খাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত প্রণোদনাগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোও গুরুত্বপূর্ণ। যদি অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যেমন ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়া তাদের বাজার প্রসারে সফল হয়, তবে তা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবু বাংলাদেশ যদি তার উৎপাদন খরচ, পণ্যের মান এবং সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পারে, তবে এই হারানো ক্রয়াদেশগুলো বাংলাদেশের দিকেই ফিরবে বলে আশা করা যায়।’

দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট উৎপাদন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘শিল্পকারখানাগুলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ না পেলে তাদের উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে কমবে। এ ক্ষেত্রে জেনারেটর বা বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে হবে, যা উৎপাদন খরচ বাড়াবে। এ পরিস্থিতিতে সময়মতো উৎপাদন ও পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে, ফলে চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গিয়ে বাজারে সংকট ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে।’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল্লাহ হিল রাকিব কালবেলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এমনিতেই অনেক। কারণ চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা সরে যাচ্ছে। চীন অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে শীর্ষ অবস্থানে চলে গেছে। এতে বোঝা যায় চীন ভারী শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। টেক্সটাইল বা কৃষি খাতে কাজ করার জন্য তাদের জনসংখ্যাও সেই পরিমাণে নেই। ফলে চীন ছোট বা মাঝারি শিল্প ছেড়ে ভারী শিল্পের দিকে ঝুঁকছে। ফলে আমাদের জন্য এটি সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এটি যে সুযোগ তা তখনই বোঝা যাবে যখন আমাদের নীতি, জনসংখ্যা এবং আমাদের প্রকল্পগুলোকে ফোকাস করতে পারব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিলাসবহুল বাংলোতে রণবীর-আলিয়ার সুখের সংসার

খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর, আসনপ্রতি লড়বেন ৯৭ জন

বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন হতে পারে?

ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র : জেনে নিন কোন পটে কারা

শাজাহান খানের মেয়ে ঐশীর নামে দুদকের মামলা

জাবিতে চার আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন

বিশ্বকাপের ড্র আজ : কখন, কোথায় হবে জেনে নিন

আরও ক্ষমতা বাড়ল পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের

গরম ডাল-ভাতের সঙ্গে লেবু চিপে খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?

১০

ফের বিতর্কে শাহরুখপুত্র

১১

মহাসমাবেশ থেকে পে-স্কেল নিয়ে নতুন ঘোষণা সরকারি কর্মচারীদের 

১২

বিপিএল: চট্টগ্রাম রয়্যালসের সমর্থকদের জন্য মিলল দুঃসংবাদ

১৩

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ ফেরত

১৪

আরও ৩০ দেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

১৫

কম্পিউটারের স্ক্রিন কি আপনার বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে, জানুন কী করবেন

১৬

মালাইকার বিস্ফোরক মন্তব্য

১৭

এভারকেয়ারে পৌঁছেছেন ডা. জুবাইদা

১৮

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, মিলল চিরকুট

১৯

‘ঋতুকামিনী’র অপেক্ষায় অধরা

২০
X