ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রকৌশল দপ্তরের টেকনিক্যাল অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সম্প্রতি তিনি উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছেন উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পড়াশোনা করার। তবে আনোয়ার টেকনিক্যাল বিষয়ের কর্মকর্তা হলেও তিনি পড়তে চান ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে। তাও আবার দেশের অখ্যাত এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে কোনো কর্মকর্তা উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে উপাচার্যের অনুমতি সাপেক্ষে কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারবেন। তথ্য বলছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই ধরনের ডিগ্রি দেখানো হয়। সেক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করে অখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেশা সংশ্লিষ্টের বাইরের বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে। আর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এই সুযোগ করে দিয়েছেন প্রশাসনিক ভবনের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান। আনোয়ার ও মনিরুজ্জামান একই এলাকার মানুষ।
নথিপত্র বলছে, ঢাবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণে সাম্প্রতিক সময়ে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি গ্রহণে অনুমতি দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের টেকনিক্যাল অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুমতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনুমতির ওই চিঠিতে বলা হয়, অফিসের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত না ঘটানোর শর্তে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে স্প্রিং সেমিস্টার-২০২৫ সেশনে এমএ (ইসলামিক স্টাডিজ) প্রোগ্রামে ভর্তি ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো। অভিযোগ উঠেছে, ভিসি অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানের তদবিরের কারণে আনোয়ার হোসেনকে এই অনুমতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়গুলো দেখার দায়িত্বে রয়েছেন মনিরুজ্জামান। মূলত তার হাত দিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ফাইল যায় উপাচার্যের কাছে। সেখান থেকে পাস হয়ে সেই ফাইল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, আনোয়ার হোসেন ও মনিরুজ্জামানের বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় তিনি অবৈধ অনুমোদনে ভূমিকা রেখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের প্রতি তিন বছর পরপর পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ সময় তাদের পূর্ব পদের অভিজ্ঞতা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গোপনীয় প্রতিবেদন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, উচ্চতর ডিগ্রি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে চাকরির পয়েন্ট দেওয়া হয়। পয়েন্টের দিক থেকে যে কর্মকর্তা এগিয়ে থাকেন তার পদোন্নতি আগেই হয়ে যায়। এই পয়েন্টে এগিয়ে থাকতেই মূলত অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরেও ডিগ্রি নেন অনেকে।
প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকার কারণে আমার পরিচিত অনেকেই ভুয়া, নামসর্বস্ব বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে পদোন্নতি নিতেন। অথচ যেই বিষয়ে তারা ডিগ্রি নিতেন, সেই বিষয়ের সঙ্গে তাদের কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম করার পরও এ ধরনের অনিয়ম আমাদের মতো সৎ কর্মকর্তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি এক-দুইটা ফাইল না, অনেক ফাইল নিয়ে কাজ করি। ক্যান্ডিডেটের (আনোয়ার) সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে আমার জেলার হলেই তার জন্য আমি তদবির করতে যাব নাকি?’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি আইন পাস হয়েছে। কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চান, তাহলে সেই বিষয় তাদের কাজের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্কিত, তা যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এ বিষয়ে আমরা এক সপ্তাহ আগে আলোচনাও করেছি।’
মন্তব্য করুন