বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই ক্যান্সার এক ভয়াবহ আতঙ্ক; কিন্তু আগাম শনাক্তকরণ, আধুনিক রোগ নির্ণয়-চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সামাজিক সচেতনতায় অনেকেই ক্যান্সারকে জয় করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। জুন মাসটি উৎসর্গ করা হয় সেসব সাহসী মানুষকে, যারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন।
ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়: ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তা নিরাময়যোগ্য। ক্যান্সার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, একই পাত্রে কিংবা পুকুরে গোসলের মাধ্যমে ক্যান্সার ছড়ায় না। চিকিৎসা করালে রোগ ছড়িয়ে পড়ে না, বরং নিরাময় কিংবা সুস্থতার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়ে। হারবাল, হেকিমি অথবা ঝাড়ফুঁক ক্যান্সার সারাতে পারে না, বরং বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো অনেক সময় মূল চিকিৎসাকে বিলম্বিত করে এবং রোগের অবনতি ঘটায়। ক্যান্সার কোনো অভিশাপ নয়, কিছু কিছু ক্যান্সার দেরিতে ধরা পড়লেও চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বেঁচে যাওয়া মানেই যুদ্ধ শেষ নয়: চিকিৎসা-পরবর্তী জীবনেও ক্যান্সার সারভাইভারদের বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তাই নিয়মিত তাদের নিকটস্থ সেবাকেন্দ্রে ফলোআপ নিশ্চিত করতে হবে। মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়মকানুন মানলে বেঁচে থাকা সহজ: তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করতে হবে, এটি ফুসফুস, মুখ, গলা, খাদ্যনালি, প্যানক্রিয়াস ও ব্লাডার ক্যান্সারের প্রধান কারণ। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার (ফল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার) খেতে হবে। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। কম লবণ ও কম চর্বির খাবার হৃদরোগ ও ক্যান্সার দুটিই প্রতিরোধে সহায়ক।
সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা, হালকা ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্থূলতা থেকে স্তন, জরায়ু, কোলন, কিডনি ও খাদ্যনালির ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলতে হবে। আর্সেনিকযুক্ত পানি, বায়ু দূষণ, কীটনাশক দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং করাতে হবে। ব্রেস্ট ক্যান্সার, সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার শুরুতেই শনাক্ত হলে নিরাময় সম্ভব। নিকট আত্মীয়ের মাঝে ক্যান্সার থাকলে স্ক্রিনিং করানো উচিত।
এইচপিভি ও হেপাটাইটিস-ই সংক্রমণ থেকে জরায়ু ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে, তাই এ দুটি রোগের টিকা নিতে হবে। যে কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ, যেমন- ক্ষুধামান্দ্য, শরীরের কোনো স্থান ফুলে ওঠা, ওজন হ্রাস, অকারণে রক্তপাত, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, গিলতে সমস্যা ইত্যাদি ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন