১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কার্যকর হয় নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)। আর ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এটি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে সরকার। সিডও সনদের শুরুতে চারটি ধারায় আপত্তি থাকলেও পরে দুটি ধারা তুলে নেওয়া হয়। ২ ও ১৬ (১) (গ) ধারায় আপত্তি বলবৎ রয়েছে। সিডও সনদের ২ ধারায় নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনে আইনের সংস্কার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ১৬ (১) (গ) ধারায় বিয়ে ও পারিবারিক আইনে সমঅধিকারের কথা বলা হয়। ৩৯ বছর পরও এ দুই ধারায় আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়নি। আপত্তি রেখেই নিয়ম অনুসারে সিডও কমিটিতে জমা দিতে নবম প্রতিবেদন তৈরি করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ওই দুটি ধারা অনুসারে, বিয়ে, বিয়েবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব আইনে নারীকে সমান অধিকার দেওয়ার প্রশ্নে সরকার অবস্থান পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এক শ্রেণির নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখতে সিডওর দুটি ধারায় আপত্তি প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নারীজীবনে। এরপরও সমঅধিকারের প্রত্যাশায় আজ রোববার দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস।
সিডও নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পলিসি লিডারশিপ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ইউনিট (প্লাউ) নবম প্রতিবেদন তৈরি করছে। সিডও সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রতি চার বছরে একবার সিডও কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয় সরকারগুলো। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইডের সম্পাদক রেখা সাহার মতে, দুটি ধারায় আপত্তি রেখেই নিয়ম অনুযায়ী নবম প্রতিবেদন তৈরি করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকার অষ্টম প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ২০১৫ সালে। নবম প্রতিবেদনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে মহিলা পরিষদ, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নবম অল্টারনেটিভ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে সরকারকে।
মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সরকারের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকার মানে সিডওকে অস্বীকার করা। ২ নম্বর ধারার সব রকমের বৈষম্যমূলক আইন বিলুপ্ত করতে হবে। সরকার ২ নম্বর ও ১৬ (১) (গ) ধারা সংরক্ষণ করে রেখেছে। এটি একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনের অধিকারের প্রশ্ন। একজন নারীর ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা না থাকলে জনজীবনে তাকে যতই স্বাধীনতা দেওয়া হোক, সে ভোগ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি, এই দুটি ধারার সংরক্ষণ অবশ্যই তুলে নিতে হবে। এ কারণেই উত্তরাধিকারে কোনো সমঅধিকার দেওয়া যাচ্ছে না। সমাজের দোহাই দিয়ে এটি করা হচ্ছে। আমরা সেটি গ্রহণ করতে রাজি নই। সমাজের এক অংশের আপত্তি থাকতে পারে। তবে সমাজের সমগ্র অংশের আপত্তি আছে কি না, সেটা দেখা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক জানান, ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে অনেকে ভাবছেন, এই দুটি ধারা ধর্মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কিন্তু এটি ভাবা দরকার, মানুষ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সরকার বা মূল জায়গা থেকে পরিবর্তন না হলেও কেন বাবা-মায়ের মাথায় ছেলেমেয়ে উভয় সন্তানকে সমঅধিকার দেওয়ার ভাবনা আসছে না। তবে অনেক বাবা-মায়ের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। আবার ছেলের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে—এমন চিন্তাভাবনা অনেকের মনে গেঁথে আছে। মেয়ের বাড়িতে থাকাটাকে সম্মানের চোখে দেখেন না। দায়বদ্ধতা থেকে ছেলেকে সম্পত্তি বেশি দিয়ে মেয়েকে বঞ্চনা করেন। ধর্ম অবমাননা করে নয়, আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সমাজের নেতৃস্থানীয়দের।
মন্তব্য করুন