আষাঢ়ের শেষে টানা বৃষ্টিতে যশোরের কৃষকদের বিস্তীর্ণ ফসলসহ সবজির ক্ষেত ভেসে গেছে। এতে জেলার বিভিন্ন মাঠে সবজি ক্ষেতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি দ্রুত না কমলে বাজারে সবজির দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, যশোরের চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নের শত শত সবজিচাষি বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যেই জমির পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করছেন। এ তিনটি ইউনিয়নকে সদর উপজেলার উৎপাদনের মূল এলাকা হিসেবে ধরা হয়। জমির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়েই এখানে সবজি চাষ হয়। বর্তমানে মাঠের পর মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে পটোল, বরবটি, পুঁইশাক, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, আগাম পাতাকপি, কচুরমুখী ও বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন চারা। কৃষকরা শীতের আগাম সবজি বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই টানা বৃষ্টিতে সেই স্বপ্নে এখন ধস নামছে।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দোগাছিয়া গ্রামের পটোল চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার পটোল ক্ষেত পুরোপুরি পানির নিচে। এই বৃষ্টির পর কিছুই আর বাঁচবে না। এবার ভালো ফলনের আশা করেছিলাম। আমার সেই স্বপ্ন মনে হয় পানিতে ভেসে যাবে।
একই গ্রামের আরেক চাষি দেলোয়ার গাজী জানান, গাছে ফুল আসলেও ভারি বৃষ্টির কারণে সব ঝরে যাচ্ছে। ফলন একেবারেই হবে না, আর গাছগুলোও টিকে থাকবে না।
আব্দুলপুর গ্রামের চারা উৎপাদনকারী টিটো রহমান বলেন, চারা কিছুটা বাঁচলেও তা বাজারে বিক্রি করা যাবে না। এই অবস্থায় আমরা খুবই অসহায়।
আরেক বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টিতে সব সবজির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর। হৈবতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বেগুন ক্ষেতের। পানি জমে গেলে গোড়া পচে গাছ মরে যায়।
যশোরের কৃষিবিদ ইউসুফ আলী বলেন, বৃষ্টির পর হঠাৎ রোদ উঠলে জমে থাকা পানির নিচে তাপ বাড়ে। এতে গাছের গোড়ায় পচন ধরে এবং ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
তিনি আরও বলেন, সবজি ও মাছ চাষের পাশাপাশি সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। ক্ষেত-ঘেরে পানি জমায় কাজ নেই, আয় নেই। ফলে খাবার জোটানোই এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্যোগে সরকারিভাবে জরুরি সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হুমায়ুন কবির বলেন, টানা বৃষ্টিতে যশোর সদর উপজেলায় চুড়ামনকাটির আব্দুলপুর ও বারিনগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন। কৃষি অফিসের পক্ষ খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
মন্তব্য করুন