ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে তিনি দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক শোকসভায় এসে এ কথা বলেন জামায়াত আমির।
এর আগে ঢাকায় জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মহানগর জামায়াতের রুকন শাহ আলমের কবর জিয়ারত এবং তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য রংপুরে আসেন শফিকুর রহমান। শোকসভায় তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) ঢাকার উত্তরায় একটি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটসহ আমাদের ধারণা শতাধিক লোক মারা গেছেন। এখনো অনেক মানুষ হাহাকার করে কাঁদছে। হাসপাতালের বিছানায় তাদের সন্তান নেই। মৃত্যুবরণ যারা করেছেন তাদের তালিকায়ও নেই। তারা কোথায়, সেই তালিকা আমাদের লাগবে।’
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমরা নিজেরা চাঁদাবাজি করব না এবং কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেব না। কোথাও আমাদের লোকেরা ঘুষ হাতে তুলে নেবে না এবং ঘুষের জন্য যে হাত বাড়াবে তার হাত অবশ করে দেওয়া হবে।’
সরকার গঠনের সুযোগ পেলে দলের কেউ সরকারি প্লট নেবে না, বিনা শুল্কের গাড়িও ব্যবহার করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আগে নিজেদের ঘর সামলাব, তারপর বাইরে সামলাব। এক দেশে দুই আইন চলবে না। আমরা যদি না নিই, কাউকেও নিতে দেব না।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘যেদিকে তাকাই, শুধু অপরাধ আর অপরাধই দেখতে পাই। নিকশ কালো অন্ধকার ঢেকে দিয়েছে সারা দেশকে। এসব কালো পর্দা আমরা ছিঁড়ে খানখান করে ফেলব—এমন তৌফিক আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে দান করেন।’
শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জামায়াতের রংপুর মহানগর আমির উপাধ্যক্ষ এটিএম আযম খান, সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, ছাত্রশিবিরের মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদসহ স্থানীয় নেতারা।
‘শাসনের নামে শোষণ দেখেছি, সৎ শাসক চাই’: শফিকুর রহমান বলেছেন, বিগত দিনে আমরা অনেক শাসন দেখেছি। এগুলো শাসন ছিল না, ছিল শোষণ। আমরা সৎ শাসক চাই, কোরআনের শাসন চাই। গতকাল সকালে খুলনার দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় চালনা বিলালিয়া আলিম মাদ্রাসা ময়দানের পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে শফিকুর রহমান জামায়াতের দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং শোকাহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গার চৌরাস্তা মোড়ে গত ১৯ জুলাই রাতে একটি দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ (৫২) মারা যান।
‘মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে’: খুলনার দাকোপ থেকে বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী আলহাজ টেক্সটাইল মিলস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াত কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান কলমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, যেখানে দুর্নীতি, সেখানেই প্রতিবাদ
করা হবে। যতদিন দেশের মানুষের মুক্তি না মিলবে ততদিন লড়াই চলবে। পেছনের জালিম ও সামনের জালিম যতই শক্তিশালী হোক, জামায়াত তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হবে। এই সংগঠন কোনো জালিমকে ভয় করে না।
জামায়াত আমির বলেন, দুর্নীতিবাজ ও জালিমের জাল ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হবে। দুর্নীতিবাজের অস্তিত্বও দেশে থাকতে দেব না।
মন্তব্য করুন