শত উন্নয়নের মাঝেও ৩০ বছরে একমুঠো মাটি পড়েনি রাস্তায়। ভাঙা আর খানাখন্দে ভরা এ মাটির রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আশপাশের হাজারো বাসিন্দাকে। বারবার রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানালেও টনক নড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের। এমনটাই জানালেন ভোলার লালমোহন উপজেলার চর উমেদ ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দারা। শিমুলতলা গ্রামের এ রাস্তাটি বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
স্থানীয় নাসিরুদ্দিন মোল্লা জানান, ১৯৯৬ সালে একবার সংস্কার করা হয়েছিল এ রাস্তাটি। তারপর দীর্ঘ ৩০ বছর পার হয়ে গেলেও একমুঠো মাটি পড়েনি এ রাস্তায়। বড় বড় গর্তের কারণে যানবাহন বিকল হয়ে যায়। দুর্ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। যানবাহন চলাচল এখন বন্ধ। আমরা চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
সরফুদ্দিন হাওলাদার নামে আরেকজন বলেন, রাস্তাটির বিভিন্ন স্থান ভেঙে সরু হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শুস্ক মৌসুমে উড়ে ধুলাবালি, আর বর্ষায় বড় বড় গর্তে পানি জমে হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়ে যায়। কর্দমাক্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় রাস্তা থেকে ছিটকানো কাদাপানি শিক্ষার্থীদের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়, তারা স্কুলে যেতে পারে না। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানাই।
গৃহবধূ রিনা রানী বলেন, বর্ষায় চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারি না। অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের। অন্তঃসত্ত্বাদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারে না। শুধু তাই নয়, রিকশা-ভ্যান চলাচলেরও অযোগ্য রাস্তাটি।
এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলে, বর্ষায় কাদামাটিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। বইখাতাও নষ্ট হয়ে যায়। সময়মতো স্কুলে যেতে পারি না। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বিলম্ব হয়। আমাদের দাবি, রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন ও বিথীকা দাস বলেন, শিমুলতলা থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষার সময় স্কুল, মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুশিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরীক্ষা থাকলেও কাদামাটির কারণে অনেক শিক্ষার্থী আসতে পারে না। রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরি।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. রাসেল বলেন, ৩০ বছর রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। রাস্তার কারণে অটোরিকশা চালাতে পারি না। যাত্রীদের সঙ্গে আমাদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার চাই।
পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু ইউসুফ বলেন, এ রাস্তাটি স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র পথ। এমন অনেক কাঁচারাস্তা আছে, যেগুলো পাকা হয়নি। কাঁচারাস্তা বর্ষায় মাটির সঙ্গে মিশে যায়। রাস্তাটির আইডি নম্বর হয়েছে। পাকা করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া আছে। প্রস্তাব পাস হলে কাজ শুরু হবে।
লালমোহন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বলেন, সামনে বরাদ্দ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ করা হবে। তবে একসঙ্গে কার্পেটিং রাস্তা করা যাবে না। আগে মাটি ও ইটের সোলিং করা হবে।
মন্তব্য করুন