রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার : এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা

বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় গড়ব শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস

রাকসু নির্বাচন
বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় গড়ব শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহিন বিশ্বাস এষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের এই শিক্ষার্থী রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে পরিচিতি পাওয়া এই তরুণী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। তার প্রচারণায় ভিন্নধর্মী স্লোগান— ‘এজিএসে বদলাবে নারী নেতৃত্বের ধাঁচ, রাবিয়ানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ব্যালট নম্বর পাঁচ’ যা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে অনেকেরই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালবেলার রাজশাহী ব্যুরো চিফ আমজাদ হোসেন শিমুল

এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্তটি কীভাবে এলো?

এষা: এজিএস পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি আমার কাছে শুধু একটি প্রার্থিতা নয়, এটি নারী নেতৃত্বের পরিসর বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ। আমি যখন দেখি নারী সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক পদে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন মনে হলো— ভিপি, জিএস, এজিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয়ও আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, একসঙ্গে পড়াশোনা করছি— তাহলে নেতৃত্বের দায়িত্বও আমরা একসঙ্গে নিতে পারব। আমি চাই সামনের সারি থেকে কাজ করে ক্যাম্পাসের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে। আমার বিশ্বাস, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব, আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব।

৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের প্রচারণা বেশ রঙিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রচারণা চালাতে গিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন?

এষা: সত্যি বলতে, অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে বলে সবার মধ্যে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে, দাবি জানাচ্ছে, আলোচনা করছে। আমিও আমার ভাবনা ও দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তারা সাদরে গ্রহণ করছে। আমি চাই আমার প্রচারণা যেন শুধু ভোটের আহ্বান নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উদাহরণ হয়। তাই প্রচারণায় এমন কিছু করার চেষ্টা করছি, যা ইউনিক (স্বতন্ত্র) হয়। শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শেখে, যে ক্যাম্পাস মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা। আমি ভালো সাড়া পাচ্ছি এবং বিশ্বাস করি, ১৬ অক্টোবর আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত নির্বাচন উপভোগ করব। জীবনের প্রথম ভোটের আমেজ, রাজনৈতিক সচেতনতা ও আত্ম-উপলব্ধি—সবকিছুই এ নির্বাচন ঘিরে তৈরি হবে।

শিক্ষার্থীদের ৩৯ শতাংশই নারী। বৃহৎসংখ্যক এ নারী ভোট টানতে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন?

এষা: আমি মনে করি, নারী শিক্ষার্থী হিসেবে নারী ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার জন্য আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা সবাই একই সমস্যার মুখোমুখি হই, একই বাস্তবতায় বাস করি। একজন নারী হিসেবে আমি বুঝি, ক্যাম্পাসে নারীরা কোথায় সমস্যায় পড়ে, কোথায় তাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি পুরুষ প্রার্থীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, নারীদের সমস্যা একজন নারী হয়েই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। আমি শুধু নারীদের বলব, আমাদের অগ্রযাত্রার পথ যেন আমরা নিজেরাই বন্ধ না করি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে নেতৃত্বে আসতে হবে, তবেই গড়ে উঠবে সমতার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে মূল প্রেরণা কী ছিল?

এষা: রাকসু নির্বাচন আমাদের সবার প্রাণের দাবি। ছাত্রসংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটি কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম। এখানেই শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও অধিকার আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা অধিকার সচেতন ও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব হয়েছি। আমি শুধু নিজের জন্য নয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করতে চাই। চাই, সুন্দর, সচেতন ও আধুনিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে। আমার চিন্তাভাবনা, আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবেই রাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেবেন?

এষা: প্রথমেই বলব নিরাপত্তা— ভয়ভীতিমুক্ত ও সাইবার বুলিংমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। শিক্ষার্থীরা যেন মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করব।

দ্বিতীয়ত, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা— আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে, সে জন্য তাদের সহযোগিতা করব। টিএসসিসি ও কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের ভাড়া ভারসাম্যের মধ্যে আনতে কাজ করব, যাতে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আর্থিক বাধা না থাকে। তৃতীয়ত, দক্ষতা উন্নয়ন ও আবাসন সমস্যা— চাকরির বাজারে টিকে থাকতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে নিয়মিত জব ফেয়ার ও ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট দূর করাকেও অগ্রাধিকার দেব। তবে কাজ করতে গিয়ে যদি দেখি, অন্য কোনো বিষয় আগে সমাধান করা জরুরি, সেটিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী?

এষা: শিক্ষার্থীদের ভোটের ওপরই নির্ভর করছে আগামী এক বছরে রাকসুর নেতৃত্ব এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। তাই শিক্ষার্থীদের বলব— ব্যক্তি নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বেছে নিন। যিনি শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করতে পারবেন, তাকেই ভোট দিন। আমাদের প্রত্যেকের ভোট অত্যন্ত মূল্যবান। আশা করি, সবাই নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নিজেদের মূল্যবান ভোট দিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গঠনে ভূমিকা রাখবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ম্যাচ শেষে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৪

চট্টগ্রামে কনসার্টে গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১

চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া উচিত নয় : বিএনপি

জবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে ইমন-সোহান

এনসিপির ‘পলিসি ও রিসার্চ উইং’ গঠন, দায়িত্ব পেলেন যারা

নড়াইলে সাংবাদিকদের মিলনমেলা

‘তিন মাসের মধ্যে ৬ লেনের কাজ দৃশ্যমান হবে’

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত

ওমরজাইয়ের বোলিং তোপে বিপদে বাংলাদেশ

১০

প্রবীণদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে : টুকু

১১

শুধু বক্তব্যে নয়, বাস্তব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে : আনোয়ারুজ্জামান

১২

গুম-খুনে জড়িতদের সঙ্গে আপস নেই : আখতার হোসেন

১৩

বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান দুলুর

১৪

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

১৫

গুম-দুর্নীতি বন্ধে ধানের শীষে ভোট দিন : আশিক

১৬

গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, ভাইয়ের পর চলে গেল বোনও

১৭

ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া

১৮

জিয়া পরিবারের ত্যাগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য : কফিল উদ্দিন

১৯

বিএনপিকে ঘায়েল করতে চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

২০
X