হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে আমদানিকারক থেকে শুরু করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষতি নিরূপণ করা হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা—আগুনে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে শুরু করে ওষুধের কাঁচামাল, বন্ডেড কাঁচামাল, কেমিক্যাল পণ্য—সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার ব্যবসায়ী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন ছোট অনেক আমদানিকারক। গুরুত্বপূর্ণ আমদানি সংক্রান্ত নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের কুরিয়ার গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। কুরিয়ারের পাশেই রাসায়নিক গুদাম। এই গুদামে কেমিক্যালের পাশাপাশি মোবাইলের এলডিসি থেকে শুরু করে অনেক মূল্যবান দাহ্য পদার্থও থাকে। আগুনে বন্ডেড পণ্যের কাঁচামাল রক্ষিত গুদামও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ড শনিবার হওয়ায়, যারা বৃহস্পতিবার রাজস্ব পরিশোধ করেছেন—এমন অনেক আমদানিকারক পণ্য খালাস নিতে পারেননি। আবার শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় এই সময় পণ্য অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি থাকে কার্গো ভিলেজে। যার কারণে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা কাস্টম হাউস সংশ্লিষ্টদের।
চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সব পুড়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট থেকে শুরু করে কেমিক্যালসহ অনেক মূল্যবান পণ্যও রয়েছে; রয়েছে বন্ডেড কাঁচামাল। অনেক সময় দ্রুত সময়ে শিপমেন্ট করার জন্য রপ্তানিকারকরা বাড়তি খরচ দিয়ে এয়ারকার্গো দিয়ে রপ্তানির কাঁচামাল নিয়ে আসেন। এসব পণ্যও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওষুধের জরুরি কাঁচামাল এয়ার কার্গোতে আসে। এসব পণ্যও পুড়ে গেছে। প্রতিদিন যে পরিমাণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, সেই হিসাবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা কাস্টম হাউসে পুরোদমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলমান থাকে। সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার কাস্টম হাউস বন্ধ থাকে। তবুও শনিবার দুপুর পর্যন্ত পণ্য খালাস কার্যক্রম চালু থাকে। এই সময়ে অন্যান্য দিনের তুলনায় কার্গো ভিলেজে পণ্য বেশি থাকে। সেইসঙ্গে শুক্র ও শনিবার কার্গো ফ্লাইটে আসা পণ্যও জমা হয় কার্গো ভিলেজে। অনেক সময় বৃহস্পতিবারের শুল্ক-কর পরিশোধ করা পণ্য চালানও রোববার খালাস হয়। যার কারণে এই সময় কার্গো ভিলেজে পণ্যের পরিমাণ বেশি থাকে। গতকাল অগ্নিকাণ্ডে কুরিয়ার ইউনিট থেকে শুরু করে এয়ারফ্রেইটের পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পণ্য চালানের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আমদানি সংক্রান্ত নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের আমদানিকারকরা বলছেন, ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে মূলত পণ্য আসে এয়ার কার্গোতে। আর সাগরপথের তুলনায় আকাশপথে পণ্য পরিবহনের খরচ অনেক বেশি। তাই দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে ব্যবসায়ীরা আকাশপথ বেছে নেন। এ ছাড়া জরুরি পণ্য হিসেবে আসে এয়ার কার্গোতে। কার্গোতে আসায় অন্যান্য কাস্টম হাউসের পণ্য চালানের তুলনায় ঢাকা কাস্টম হাউসের পণ্য চালান ছোট ছোট হয়। এই অগ্নিকাণ্ডে ছোট ছোট অনেক আমদানিকারক নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
কথা হয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানিকারক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৪৮৬ কার্টন ছিল, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এই পণ্য চালানের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা শুল্ক-করও পরিশোধ করেছি। এক আগুনে সব শেষ হয়ে গেল।
মন্তব্য করুন