দেশের সরকারি হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের যন্ত্রপাতি সক্রিয় করতে অন্তত ২০ হাজার টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। কিন্তু দেশের সরকারি হাসপাতালে মাত্র ১ হাজার টেকনোলজিস্ট কর্মরত। দুই মাস আগে আরও ২০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রেডিওলজির চিকিৎসক, সনোলজিস্ট কিংবা টেকনোলজিস্টের এই সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হয়, সরকারও রাজস্ব হারায়। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডিওলজি ও বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্টের তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ২০১২ সাল দিবসটি
পালিত হয়ে এলেও দেশে ২০১৫ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং এবং অ্যাসোসিয়েশন অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্ট যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত একটি র্যালি করবে। এরপর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
জীবনযাত্রা যত উন্নত হয়েছে, অসংক্রামক রোগের উৎপাত, নানা দুর্ঘটনা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেইসঙ্গে সূক্ষ্মভাবে রোগ নির্ণয়েও এখন জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ রোগ নিরাময়ের পূর্ব শর্ত সঠিক রোগ নির্ণয়। ১৮৯৫ সালের ৮ নভেম্বর জার্মান বিজ্ঞানী উইলিয়াম কনরাড রন্টজেন চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এক্স-রে আবিষ্কার করেন। এরপর থেকেই চিকিৎসার মূল ধারণা পাল্টে যায়। বৈপ্লবিক এ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অনুমাননির্ভর চিকিৎসার বদলে চিকিৎসা শুরু হয় সুনির্দিষ্ট উপায়ে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিংয়ের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আধুনিক চিকিৎসার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে রেডিওলজি ও ইমেজিং খাতে মাত্র ৫০০ জন চিকিৎসক কর্মরত। অথচ দেশের ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের বিপরীতে এ খাতে অন্তত ৩ হাজার চিকিৎসক দরকার। প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যা নগণ্য। অথচ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্টের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বেশ নজর দিয়েছে। প্রতিনিয়ত যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়। এক্স-রে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে জনগণ সেবা বঞ্চিত হয়। টেকনোলজিস্টের অভাবে যন্ত্রপাতি অচল হয়ে যায়। রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে চলে যায়। আর রাজস্ব হারায় সরকার।
আন্তর্জাতিক রেডিওলজি ও বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবসের ইতিহাস: ২০১১ সালে এক্স-রে এর আবিষ্কারক বিজ্ঞানী রন্টজেনের মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণে প্রথম এবং একমাত্র দিবস হিসেবে ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় রেডিওলজি দিবস উদযাপিত হয়েছিল। এর আয়োজক ছিল ইউরোপীয় সোসাইটি অব রেডিওলজি। এ উদযাপনে সাফল্যের পথ ধরে আন্তর্জাতিক রেডিওলজি দিবস প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে একই বছর ইউরোপীয় রেডিওলজি সোসাইটি (ইএসআর) যুক্ত হয় রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব উত্তর আমেরিকা (আরএসএনএ) এবং আমেরিকান রেডিওলজি কলেজের (এসিআর) সঙ্গে। একই সঙ্গে সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, বিজ্ঞানী রন্টজেনের মৃত্যুবার্ষিকীর পরিবর্তে এক্স-রে আবিষ্কারের দিনে আন্তর্জাতিক রেডিওলজি দিবস উদযাপিত হওয়া উচিত। পরে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠিত রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব উত্তর আমেরিকার (আরএসএনএ) বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সংগঠন দিবসটি নির্ধারণ করে। এরপর থেকে এক্স-রে আবিষ্কারের দিন অর্থাৎ ৮ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক রেডিওলজি ও বিশ্ব রেডিওগ্রাফি দিবস। বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।