ঢাকার সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত সাড়ে ছয় বছরের এক শিশুর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছে পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির স্বজনরা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
শিশুটির মা সুফিয়া পারভীন বলেন, শরীরে জ্বর থাকায় তার মেয়ে হাবিবা হীরা চৌধুরীকে গত ৭ জুলাই সেন্ট্রাল হসপিটালে অধ্যাপক এ এফ এম সেলিমের অধীনে ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। প্রথমে স্যালাইনের সঙ্গে জ্বরের ওষুধ প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা; কিন্তু ওই রাতেই তাকে স্যালাইনের মাধ্যমে রোফিসিন নামে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এভাবে কয়েক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর আমার মেয়ের লিভার ড্যামেজ হতে থাকে। তার পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হয়। বিষয়গুলো জানানোর জন্য নার্স ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, চারটি ফ্লোরের জন্য একজন ডিউটি ডাক্তার থাকেন। তিনি বসেন সপ্তমতলায়। বেশিরভাগ সময় তাকে পাওয়া যায় না। ভর্তির পর অধ্যাপক সেলিম মাত্র তিনবার রোগীর কাছে এসেছেন। গত ১০ জুলাই রাতে ডাক্তার আমার মেয়েকে দেখতে এসে তার ব্লাডপ্রেশার ও পালস পাচ্ছিলেন না। সে সময় হাবিবার শ্বাসকষ্ট, হার্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তিনি আমাদের বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। তাকে জরুরিভিত্তিতে পিআইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে; কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে এ ব্যবস্থা নেই। তারা হাবিবাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে আমরা রাতেই সেখানে নিয়ে যাই।
সেখানে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। ফেরিটিন পরীক্ষায় দেখা যায়, যেখানে একজন শিশুর ফেরিটিনের মাত্রা ৭ থেকে ১৪০ থাকার কথা, সেখানে হাবিবার ধরা পড়ে ২১ হাজার ৪৮৩। রিপোর্ট দেখেই সেখানকার চিকিৎসকরা বিড়বিড় করে বলেন, সব শেষ করে এখানে এনেছেন। রোগীর লিভার ফাংশন পুরো শেষ হয়ে গেছে। তারপরও পিআইসিইউতে নিয়ে তারা চিকিৎসা শুরু করেন; কিন্তু আমার মেয়েকে আর বাঁচাতে পারেননি। আমরা জানতে পেরেছি, ডেঙ্গু রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় না। যদি কোনো কারণে দিতেই হয়, তাহলে ফেরিটিন পরীক্ষা করে তারপর দিতে হয়; সেন্ট্রাল হসপিটাল তা করেনি। আমি মেয়েকে আর ফিরে পাব না; কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তবে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক সেলিম বলেন, যদি ব্লাড কাউন্ট বেশি হয়, তাহলে চিকিৎসার ভাষায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যায়। তাই ওই রোগীকেও দেওয়া হয়েছিল। আর পিআইসিইউ সাপোর্ট এ হাসপাতালে নেই, তাই রোগীকে অন্যত্র পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত মাসে সন্তান জন্ম দিতে এসে কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় আসে সেন্ট্রাল হসপিটাল। ওই হসপিটালের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা বিদেশে থাকা সত্ত্বেও তার নাম করে আঁখিকে সেখানে ভর্তি করা হয়।
মন্তব্য করুন