২০২৩ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মাহবুবুল হক সুমনকে সভাপতি ও মো. দিদারুল আলম দিদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কথা ছিল তাদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি স্থবিরতা কাটিয়ে ছন্দে ফিরবে যুবলীগ। হয়েছে তার উল্টো। আরও স্থবির হয়ে পড়েছে মহানগর যুবলীগ। দুই বছরেও সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেননি দুই নেতা। গঠন করতে পারেননি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। এমনকি নগরের গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি থানা ও ৪৪টি ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিও গঠন হয়নি। দুই বছরে মাত্র তিনটি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। সেই তিন ওয়ার্ডের দুটিই হচ্ছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নিজ নিজ এলাকায়। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতার এমন কাণ্ড ঘিরে এখন যুবলীগের নেতাদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা। অনেকেই চট্টগ্রাম যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে দুষছেন। সেইসঙ্গে নিজ এলাকা বাদে বাকি সাংগঠনিক ওয়ার্ডগুলোতে মজবুত কাঠামো দাঁড় করাতে না পারা, দুই বছরেও নগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করাসহ নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সুমন-দিদার। নগর যুবলীগের শীর্ষ এই দুই নেতার নেতৃত্বের যোগ্যতা, দক্ষতা, দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এত কাণ্ডের পরও কমিটির শেষ দিকে এসে এখন ‘সাংগঠনিক মাস’ ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন অভিভাবক সংগঠন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
নেতাকর্মীদের আক্ষেপ, তিন বছরের জন্য নগর যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই হিসেবে এখন কেটে গেছে দুই বছর। অর্থাৎ কমিটির মেয়াদ আর মাত্র এক বছর বাকি আছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এ ব্যর্থতার দায় না নিয়ে উল্টো নানা অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন দুই নেতা। এখন মেয়াদের শেষ দিকে এসে ‘সাংগঠনিক মাসের’ নামে ‘নাজিল কমিটি’ গঠনের চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন যুবলীগের শোডাউন, মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। যেখানে মূল কার্যক্রমেই স্থবির, সেখানে সাংগঠনিক মাস ঘোষণা দিয়ে ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে কীভাবে যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করা হবে—এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে রাজি হননি অনেকেই।
নগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মো. আলমগীর টিপু কালবেলাকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের যে কার্যক্রম, সেগুলো নিয়ে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আছেন, উনারাই কথা বলবেন। আমি উনাদের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’
এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম দিদার ফোন রিসিভ করেননি। পরে মেসেজ দেওয়া হলেও কোনো উত্তর দেননি।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক সুমন কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের কমিটি ঘোষণার পর চট্টগ্রাম নগরীর ১০ নম্বর আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। এরপর গেল জাতীয় নির্বাচন। সেখানেও যুবলীগের কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এ কারণে নগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আর একটি কাঠামো দাঁড় করানোর জন্যই তাৎক্ষণিক তিনটি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সামগ্রিক বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে নগর যুবলীগের সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে কাজ শুরু করেছি। সাগঠনিক ওয়ার্ডগুলোতে কাজ করছে সাতটি সাংগঠনিক দল। দলগুলোর রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর যুবলীগের চেয়ারম্যানের পরামর্শক্রমে বাকি কাজগুলোও সম্পন্ন করা হবে।’