মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৭ এএম
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরেজমিন

অঙ্গ হারানোদের আর্তনাদে ভারি নিটোরের আকাশ

সাম্প্রতিক সহিংসতা
অঙ্গ হারানোদের আর্তনাদে ভারি নিটোরের আকাশ

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ক্যাজুয়ালটি-১-এ চিকিৎসাধীন ট্রাকচালক মামুন মিয়া (৩১)। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে গত ১৯ জুলাই দুপুরে ভৈরবের নিউ টাউন এলাকায় মামুন ট্রাক পার্কিং করেছিলেন। এমন সময় তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। তাকে আন্দোলনকারী মনে করে একদল দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কোপায়। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এলোপাতাড়ি কোপে মামুনের হাতের শিরা-উপশিরা কেটে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় পচন ঠেকাতে তার একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মামুন প্রায়ই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওঠেন।

পাশেই ক্যাজুয়ালটি-২ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে ভর্তি সহিংসতায় আহত ৫৭ জন। তাদের একজন প্রাইভেটকার চালক আরাফাত হোসেন। তিনি রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ১৮ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ডিউটি শেষ করে দক্ষিণখানের বাসায় ফিরছিলেন। এমন সময় তার বাঁ পায়ে গুলি লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আরেক প্রাইভেটকার চালক তাকে উদ্ধার করে নিটোরে ভর্তি করেন। শেষ পর্যন্ত আরাফাতের সেই পা কেটে ফেলতে হয়েছে। হাত হারানো মামুন, পা হারানো আরাফাতের সংসারের কী হবে? তাদের চিৎকারে নিটোরের আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। শুধু এ দুজনই নন; নিটোরে এখনো গুলিতে আহত ৭৩ জন ভর্তি। তাদের মধ্যে ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তাদের সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে আরও অন্তত কয়েক মাস লেগে যাবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নিটোর হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৭ জুলাই সকাল ৭টা থেকে গতকাল সকাল ৭টা পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন ১ হাজার ৬৯৩ রোগী। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২৪১ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ২১৪ জন গুলিবিদ্ধ আহত আসেন ১৯ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে। নিটোরে এখনো ক্যাজুয়ালটি-১ এ ১৩ জন, ক্যাজুয়ালটি দুইয়ে ৫৭ জন, ক্যাজুয়ালটি-৪ এ একজন, ইএফ ওয়ার্ডেও একজন এবং ২১৪ নম্বর কেবিনে আরও একজন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সাবিত্রী রানী চক্রবর্তী বলেন, গুলিবিদ্ধ অনেক রোগী প্রথমে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর যখন আহত পায়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, পা কেটে ফেলতে বলেন, তখন তারা নিটোরে ছুটে আসেন। এর মধ্যে কেটে গেছে গোল্ডেন পিরিয়ড। বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের হাত ও পায়ের শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল। পরে সেসব রোগীকে আমাদের চিকিৎসকরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জীবন রক্ষার্থে হাত কিংবা পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন অন্তত ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

তাদের মধ্যে কোনো কোনো রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল জানিয়ে সাবিত্রী রানী চক্রবর্তী বলেন, ভর্তি রোগীর সবারই জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করতে হয়েছে। চিকিৎসক-নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের স্বজন মনে করে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ কৃষি সহযোগিতায় নতুন অঙ্গীকার

সরকার কড়াইলের বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকারের তোয়াক্কা করছে না : সাকি

কক্সবাজারে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে তথ্য দিলেন সালাহউদ্দিন

পরিবারকল্যাণ কর্মীদের ১০ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও সদকায়ে জারিয়া

শেবাচিম হাসপাতালে চালু হলো মৃগী রোগীদের ইইজি পরীক্ষা

রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেসব সুবিধা পান

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহার শুরু করল চসিক

ববি শিক্ষার্থীকে রাতভর র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

১০

এনসিপির কমিটি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে, সাংবাদিকদের হেনস্তা-তালাবদ্ধ করার হুমকি

১১

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য আ.লীগ সরকার দায়ী : মুশফিকুর রহমান

১২

আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ছুটি চাইলেন বার্সা ডিফেন্ডার

১৩

খালেদা জিয়াকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত ভারত : মোদি

১৪

বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যার কারণ জানালেন অস্ত্র হাতে থানায় যাওয়া যুবক

১৫

প্রাইভেটকারচাপায় প্রাণ গেল সাবেক ইউপি সদস্যের

১৬

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ নরেন্দ্র মোদির

১৭

আরব আমিরাতে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন শুরু, প্রবাসীদের উচ্ছ্বাস

১৮

টিউলিপ সিদ্দিকের রায় নিয়ে যা বলছে লেবার পার্টি

১৯

সিলেট নয় ঢাকাতেই শুরু হবে বিপিএল

২০
X