পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটের আনোয়ারুল হক কাকারকে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) আইনপ্রণেতা। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আজ তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকার শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও জাতীয় পরিষদের (এনএন) বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজ বেলুচিস্তান প্রদেশের সিনেটর কাকারের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করার পর বহুল প্রত্যাশিত এ ঘোষণা দেওয়া হয়। খবর দ্য ডন ও জিও নিউজের।
কাকারকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল শাহবাজের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজা রিয়াজ বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, ছোট কোনো প্রদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত। তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেলুচিস্তানের সিনেটের কাকার বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমি তার নাম প্রস্তাব করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মতি দিয়েছেন। আমি এবং প্রধানমন্ত্রী এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেছি। তবে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন দিন আগে গত ৯ আগস্ট রাতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে ভেঙে দেওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। তবে জাতীয় পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হলে সাধারণ নির্বাচন ৬০ দিনের মধ্যে করার বিধান আছে। জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আলভি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে একটি চিঠি লেখেন। এতে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজকে ১২ আগস্টের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন যোগ্য ব্যক্তির নাম সুপারিশ করার পরামর্শ দেন। এরপর তারা বৈঠক করে কাকার বিষয়ে একমত হন।
কাকার পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট্ট প্রদেশ বেলুচিস্তানের বাসিন্দা। তিনি সেখানকার একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক। ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের মার্চে তার ছয় বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। সক্রিয় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি পরিচিত। সিনেট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কাকারকে সেদেশের একজন তুখোড় বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) এ আইনপ্রণেতা পশতুন জাতিগোষ্ঠীর কাকার উপজাতির সদস্য। যে কারণে তিনি পশতুন ও বালুচ উভয় গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১ সালে বেলুচিস্তানের কিল্লা সাইফুল্লাহ জেলার মুসলিমবাগ এলাকায় তার জন্ম। নিজ শহরে স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাকারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল কিউ-লীগের টিকিটে কোয়েটা থেকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কাকার বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
সিনেটের পররাষ্ট্র ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। সিনেটের ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটি, অর্থ ও রাজস্ব, পররাষ্ট্র এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সিনেটে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সংসদীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেন। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য দলটির সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে দলটি নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মন্তব্য করুন