প্রকৃতিতে এখন চলছে পূর্ণ বর্ষার রাজত্ব। খানিক মেঘলা আকাশ, তারপরই অঝোর ধারায় বর্ষণ। বৃষ্টির শীতল ছোঁয়ায় সতেজ, প্রাণবন্ত চারপাশের বৃক্ষ-তরুলতা। কখনো হাওয়ার তোড়ে দোল খায় সবুজপাতা, একই সঙ্গে নেচে ওঠে ঝোপঝাড়, ডালপালা। সবুজ-শ্যামলিমায় শোভিত বর্ষার প্রকৃতিতে ফুল ফোটাও থেমে নেই। এমন দিনে বাগানে সবুজপাতার ঝোপ আলো করে ফুটেছে কাঁঠালচাঁপা। লতাময় ঝোপের আড়ালে সদ্য ফোটা ফুলের উচ্ছ্বাস সত্যিই নজরকাড়া। মিষ্টি হলুদ রঙের কাঁঠালচাঁপা আমাদের সবারই প্রিয় ফুল।
কাঁঠালচাঁপা (Artobotrys odoratissimus) বিখ্যাত এর সুগন্ধের জন্য। পরিপূর্ণ বিকশিত ফুলে ঠিক যেন পাকা কাঁঠালের মধুর ঘ্রাণ। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের হাওয়ায় হাওয়ায়। এমন আকুল করা মিষ্টি ঘ্রাণে উদাস হয় হৃদয়-মন। ছয় পাপড়ির উচ্ছলতা আর মনোলোভা ঘ্রাণের জন্য পুষ্পপ্রেমীদের কাছে তাই কাঁঠালচাঁপার বিপুল জনপ্রিয়তা। এর অপূর্ব শোভা-সুরভি মনে করিয়ে দেয় শৈশবে শেখা ছড়ার কিছু মধুর পঙক্তি: ‘আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/ আব্বা বলেন, মন দে/ পাঠে আমার মন বসে না/ কাঁঠালচাঁপার গন্ধে (আল মাহমুদ)।
বর্ষাকালজুড়ে ফোটা অব্যাহত থাকলেও কাঁঠালচাঁপার প্রস্ফুটন শুরু হয় গ্রীষ্মে। এর গাছ দেখতে ঝোপজাতীয়। শক্তলতার বিন্যাস এক সময় ঝোপে পরিণত হয়। গাঢ় সবুজ পাতা, পাতার বুনন অত্যন্ত নিবিড়। তাই ফুল ফোটার আগে পাতাময় কাঁঠালচাঁপার ঝাড়ের সৌন্দর্যও দেখার মতো। ফুলের রং প্রথমে হালকা সবুজ। প্রস্ফুটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলদে রং ধারণ করতে শুরু করে। পরিপূর্ণ ফুলের রং উজ্জ্বল হলুদ। ফুল পাতার ফাঁকে বোঁটায় ঝুলে থাকে। কাঁঠালচাঁপা গাছে পাতা এতটাই ঘন যে, ফুল সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। কৌতূহলে পাতার ভেতর খুঁজলেই ফুলের দেখা মেলে। ফুলের বোঁটা বাঁকা, আঁকশির মতো। ফল গোলাকার, ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে।
ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ অনেকের ব্যক্তিগত বাগানে কাঁঠালচাঁপা গাছ দেখা যায়। বীজ ও কলমের মাধ্যমে কাঁঠালচাঁপার বংশবিস্তার। এর আদিনিবাস দক্ষিণ চীন থেকে ভিয়েতনাম অঞ্চল।
মন্তব্য করুন