বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেছেন, বর্তমানে সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাট দেওয়ার পর ডিজেলে প্রতি লিটারে ১ টাকা ৬৬ পয়সা মুনাফা করছে বিপিসি। এ অবস্থায় সরকার চাইলে দাম কিছুটা কমানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, তবে এক মাসে দাম কমানোর পর পরের মাসে বেশি বাড়াতে হলে তখন জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই কারণে দাম সহনশীল রাখার মতো করেই আমরা নির্ধারণ করি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিপিসির কার্যালয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপিসির ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সহযোগিতা করে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি)।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে আসার পর সবাইকে বলেছি কোনো তথ্য গোপন থাকবে না। সবকিছু থাকতে হবে স্বচ্ছ এবং উন্মুক্ত। আমরা দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছি, উদ্যোগ ছোট হতে পারে; কিন্তু যোগফল অনেক বেশি।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক ক্রয়াদেশ প্রদান ও আলোচনার মাধ্যমে প্রিমিয়াম খরচ অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। জুলাই-ডিসেম্বরে প্রিমিয়াম খরচ ৮ দশমিক ৮৩ ডলারে নামিয়ে এনেছি। আগে জি টু জি ভিত্তিতে আনা জ্বালানি তেলে ১২ দশমিক ৩ ডলার এবং দরপত্রের মাধ্যমে আনা তেলে ৯ দশমিক ৩২ ডলার পরিশোধ করা হতো। প্রিমিয়াম খরচ কমে যাওয়ায় বিদায়ী জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ৭৬৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বিপিসির। এভাবে আমরা তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন চালু হলে প্রিমিয়াম খরচ আরও কমে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচ কিছুটা বেড়েছে। ২০২২ সালের ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকার মতো, এখন ১২০ টাকার ওপরে দিতে হচ্ছে। এ সময় বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলা শুরু করায় সরকারি ব্যাংকগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর কমে গেলে অবশ্যই কমে আসবে। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় এখনই ২০ টাকা মূল্য কম রয়েছে। আরও বেশি কমে গেলে চোরাচালান হওয়ার একটা শঙ্কা থেকে যায়।
এসপিএম কবে চালু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করতে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগবে। কারণ আগে এই প্রকল্পটি বিশেষ আইনে করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আইন বাতিল করায় এখন এই প্রকল্পের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া আমরা চেষ্টা করছি, জিটুজি করতে। দুটি প্রক্রিয়াই চলমান আছে।
বিপিসির জেনারেল ম্যানেজার (বণ্টন ও বিপণন) মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বলেন, তেলের মূল্য এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ট্যাগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর বেড়ে গেলে বাড়বে, কমে গেলে কমবে।
কর্মশালায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ৫ লাখ ৮৪ হাজার টন কমে এসেছে। দু-একটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলেও সবচেয়ে বেশি ডিজেলের প্রায় ৭ লাখ টনের মতো কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিজেলের ব্যবহার ছিল ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যবহৃত হয়েছে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৯ টন। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া এর প্রধান কারণ বলে মনে করছে বিপিসি।
ডিজেলের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে অকটেনের ব্যবহার কমেছে। আগের অর্থবছরে অকটেনের ব্যবহার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৭ টন, যা গত অর্থবছরে হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৬ টন। তবে ব্যবহার বেড়েছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট-এ-১ এর। আগের বছরের তুলনায় ৬৯ হাজার ৪৯৪ টন ব্যবহার বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন জ্বালানি তেল উৎপাদিত হয়েছে। ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৬৩ শতাংশ হচ্ছে ডিজেল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল ১৪ শতাংশ। কর্মশালায় বিপিসির পরিচালক (বিপণন) কবীর মাহমুদ, পরিচালক (অপারেশন ও পরিচালন) অনুপম বড়ুয়া, বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) এটিএম সেলিম অংশ নেন। এ ছাড়া এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর, নির্বাহী পরিচালক সেরাজুল ইসলামসহ সদস্যরা অংশ নেন।