আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ০৮:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকায় তিন দিনে তিন রাজনৈতিক সমাবেশ

আ.লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানাবে এনসিপি

শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে এনসিপির সমাবেশ
আ.লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানাবে এনসিপি

আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকায় বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিতরণসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সমাবেশে জনসমাগম কম হওয়ায় এবার বড় ধরনের জমায়েতের চিন্তা করছে দলটি। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানানো হবে বলে জানান নেতারা।

আগামী ২ মে (শুক্রবার) বেলা ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে এ সমাবেশ করবে এনসিপি। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া একই দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্যরা অংশ নেবেন।

সমাবেশ উপলক্ষে গত সোমবার থেকে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে এনসিপি। গুলিস্তান, বাংলামটর, মিরপুরসহ কয়েক জায়গায় এ কার্যক্রম চলছে। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশ নিতে দেখা যায়। লিফলেটে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলের সাতটি অপরাধের কথা উল্লেখ করেছে দলটি। এগুলো হলো—২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড; গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহরণ; ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ; ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো হত্যাযজ্ঞ; লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার; ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় চালানো নজিরবিহীন গণহত্যা।

এ ছাড়া এনসিপির লিফলেটে চারটি দাবি উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—প্রতিটি অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন গঠন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যবস্থা; আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা তথা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল; বিচার চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।’

মঙ্গলবার গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে গণসংযোগকালে সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ২০১৩ সালে হেফাজতের সমাবেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়েছে দলটি। এতকিছুর পরও তাদের বিচার হচ্ছে না। আমরা এবার জোরালো দাবি জানাব এবং মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সব অধিকার হারিয়েছে।

সমাবেশ প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এই কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জোরালোভাবে জানানো হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও অন্য বড় হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার দাবি করা হবে।

এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, ফার্মগেটসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল করে এনসিপি। তবে এসব সমাবেশে খুব বেশি জনসমাগম দেখা যায়নি; বরং উপস্থিতি নিয়েও হয়েছে বিতর্ক। গত ২৬ এপ্রিল দলের সভা থেকে বড় জমায়েতের বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এবারের সমাবেশে উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির ঢাকা দক্ষিণের সংগঠক আসাদ বিন রনি কালবেলাকে বলেন, আমাদের মূল দাবি থাকবে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হবে। শুধু ঢাকায় আমাদের ২০-৩০ হাজার সমর্থক আছেন। তারাসহ শুভাকাঙ্ক্ষী, নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেবেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরাও এতে উপস্থিত থাকবেন।

দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ করছি। এবার আমরা ঢাকায় এ দাবিতে বড় সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি, সমাবেশটি অনেক বড় করার। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বড় জমায়েত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমাদের মূল দাবি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা। এবার এ দাবিতে আমরা আরও সোচ্চার ভূমিকা রাখব। জুলাইয়ের পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ তাদের রায় দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে কোনো ফরম্যাটেই আর বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ যেন কোনোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি সব সময় সজাগ থাকবে। শুক্রবারের সমাবেশ থেকে এ দাবি আরও জোরালো হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘দুঃখিত, এবার আর তা হবে না’

‘কূটনীতির দরজা কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয় না’

তেলের দামে বড় পতনের আভাস

এসএসসি পাসেই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরি

৩২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বাবা-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি / রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রসমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা

ইরানের কমান্ডার কানি গুপ্তচর কি না, জানাল মোসাদ

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

চাল না কিনলে জাপানে নতুন করে শুল্কের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

হলি আর্টিসান হামলার আজ ৯ বছর

১০

সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

১১

কারাগারে যেমন কাটছে মমতাজের

১২

পাকিস্তানে একযোগে হামলা চালাতে চায় ভারত-ইসরায়েল

১৩

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল জমিয়ত

১৪

মহররমে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি : যা করণীয়

১৫

যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

১৬

সরকারি চাকরিতে বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা

১৭

দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে আজ 

১৮

০১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে

২০
X