কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘ওয়াশ’ কর্মসূচিকে খাত হিসেবে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির দাবি

ডরপ-এর গোলটেবিল বৈঠক
‘ওয়াশ’ কর্মসূচিকে খাত হিসেবে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির দাবি

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘ওয়াশ’ (পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন) কর্মসূচির জন্য প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ না রেখে একে খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হেলভেটাস বাংলাদেশের সহায়তায় ডরপ-এর আয়োজনে ‘অ্যাকশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ এনসিউরিং সাসটেইনেবল সলিউশন (অ্যাকসেস)’ প্রকল্পের অধীনে ‘স্থানীয় সরকার ও পানি-স্যানিটেশনবিষয়ক প্রাক-বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি ওঠে।

সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশ কর্মসূচির কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়, যা পরবর্তী প্রকল্প গ্রহণ না করা পর্যন্ত গতি পায় না। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু এর কার্যক্রম খাত হিসেবে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব, যা বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করলে কয়েকগুণ বেশি ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।

ডরপ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং মোহাম্মদ যোবায়ের হাসানের সঞ্চালনায় সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ব্যাংক সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য সাব্বির আহমেদ, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জিল্লুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সচিব মুন্সি আলাউদ্দিন আল আজাদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এহতেশামুল রাসেল খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বক্তব্য প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ডরপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম নোমান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিকের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর উপস্থাপনাপত্র পরিবেশন করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

ওয়াশ কার্যক্রমকে খাত হিসেবে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাজেট তৈরি করে মন্ত্রণালয়, আর বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রকল্পভিত্তিক। সুতরাং প্রকল্প শেষ বাজেট শেষ। বাজেট বরাদ্দের অর্থ একেবারে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যায়; কিন্তু এর যে খরচের ধরন, তা খুবই বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর। এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে, বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

ওয়াশ কর্মসূচি নিয়ে কোনো ‘ভিশন’ না থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আছে; কিন্তু তাদের কোনো ভিশন নেই। যখন কোনো প্রজেক্ট যায়, তখন তারা দেখে। ঠিক একইভাবে, আমাদের পানি নিয়ে কোনো ভিশন নেই। পানি শুধু সুপেয় পানি নয়, চাষের পানি, শিল্পের পানি, স্যানিটেশনের জন্য পানি। পানির সমস্যা শুরু হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও প্রকট হবে।’

বাজেটের রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গের সমন্বয়হীনতার উদাহরণ টেনে ড. তোফায়েল আরও বলেন, ‘বাজেটে দেওয়া বরাদ্দ বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান খরচ করে। কিন্তু বছরের মাঝপথে কত খরচ হয়েছে, তা জানার উপায় নেই। এমনকি জেলাগুলোতে বাজেটের যে টাকা পাচ্ছে, তার হিসাব কেউ জানে না। কে কত টাকা খরচ করছে, তা জানতে হবে। তা ছাড়া স্থানীয় সরকারের যে বাজেট তা খুবই সামান্য, এটা দিয়ে কী হবে।’ এবং তিনি জনঅংশগ্রহণে জেলাভিত্তিক বাজেট করার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ৭৭৬ টি উন্নয়ন সংস্থার তদারককারী সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যে কর আদায় হয়, তা চলতি বাজেট হিসেবে খরচ হয়ে যায়, বাকি যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, তা হয় ঋণের টাকায়। বাজেটের সদ্ব্যবহার করতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতেই হবে।’

আরেক বিশেষ অতিথি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া যে বাজেট বরাদ্দ হবে, তার সদ্ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে বাস্তবায়নকারী যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বাজেট বরাদ্দের অর্থ ব্যবহার করবে, তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে, যাতে সে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে। আমাদের যে যে জায়গায় বাজেট দরকার সেখানে বরাদ্দ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। তা ছাড়া, স্থাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করলে তা আপনাকে ফল দেবেই।’

অনান্য আলোচকদের মধ্যে হেলভেটাস বাংলাদেশের পানি, খাদ্য এবং জলবায়ু বিষয়ক প্রগ্রামের প্রধান মোঃ মাহমুদুল হাসান পানি সংকট মোকাবেলায় একটা পানি পুঞ্জিকা করার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এতে করে কোন অঞ্চলে কখন পানির সংকট কম বা বেশি থাকে সকলে জানতে পারবে এবং প্রয়োজনিয় ব্যবস্তা নিতে পারে। এছাড়া এ বিষয়টি বছরের বিভিন্ন পরিকল্পনায় এবং জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সাব্বির আহমেদ বলেন, সরকারের ইচ্ছা থাকলেও প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই। তার ওপর গত কয়েক বছরে এত দেশি-বিদেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে একটা বড় অংশ ঋণের সুদ পরিশোধে চলে যায়। এবং ওয়াশ এর জন্য প্রকল্প ভিত্তিক না বরং খাত ভিত্তিক বা বাজেট কোড অনুযায়ি বাজেট হইয় তাহলে এই খাতের উন্নতি সম্ভব। আলোচকদের মধ্যে হেলভেটাস বাংলাদেশের ভয়েজ, অন্তর্ভুক্তি এবং সমন্বয় ডোমেইন কো-অর্ডিনেটর মোঃ শাহরিয়ার মান্নান বলেন ‘আমরা জন অংশগ্রহণ মূলক বাজেট এর অংশ হিসাবে খুলনা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্মুক্ত বাজেট সভার আয়োজন করে থাকি। এতে করে বাজেট প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহণ হয়। এবং তারা এই সম্পর্কে জানতে পারে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনাপত্র উপস্থাপনকালে ডরপ-এর প্রতিষ্ঠাতা নোমান বলেন, বৈষম্য দূরীকরণে মাতৃত্ব ও শিশুকেন্দ্রিক স্বপ্ন প্যাকেজ বাস্তবায়নের বাজেট করতে হবে, মা-কেন্দ্রিক সরকার গঠন করতে হবে, যা ২০ বছর বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে।

সমাপনী বক্তব্যে ডরপ-এর চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে পানির জন্য— কেউ বুঝে বলুক আর না বুঝে বলুক। পানি নিয়ে আমরাও এক প্রকার যুদ্ধের মধ্যেই আছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। এটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, আমাদের উন্নতি হচ্ছে না, বৃদ্ধি হচ্ছে।’

আরেক উপস্থাপনাপত্রে মাহফুজ কবীর বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশনকে ঘিরে যদি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়, তবে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যাবে। পরে বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেও লাভ হবে না। ওয়াশ কর্মকাণ্ডে সমুদ্র উপকূলে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার খাতে জনপ্রতি বাজেট মাত্র ৪৬৬ টাকা হতে পারে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্যানিটেশন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনই যদি না থাকে, তবে সবই বৃথা। সেজন্য দেশের জন্য ওয়াশের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

এহতেশামুল রাসেল বলেন, সরকার প্রকল্প অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়। ওয়াশ কার্যক্রম যদি খাত হিসেবে বিবেচিত না হয় তবে এ খাতে বরাদ্দ কম-বেশি হবেই। এ বিষয়ক প্রকল্প প্রায় সব শেষ। সুতরাং নতুন কোনো প্রকল্প গৃহীত না হলে এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

মীর সাহিদ বলেন, সারা দেশে ৪৮টি প্রকল্পের অধীনে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে পানি সরবরাহ করা হয়। তবে পার্বত্য, হাওর ও উপকূল অঞ্চলে পানি সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থার অর্থায়নে পার্বত্য ও উপকূল অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। সারা দেশে স্যানিটেশনের ওপর কোনো প্রকল্প নেই। তাই বাজেট কম, যতটুকু আছে তা বাস্তবসম্মত নয়।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা “বাইসস” এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, ইউনিয়ন পরিষদ শক্তিশালি করার কথা তুলে ধরেন; দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধি সুফিয়া বেগম বলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষতিপূরণ চাই। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মোঃ সামসুদ্দোহা, রাবেয়া বেগম, নির্বাহী প্রধান, এসডিএস, সানজিদা জাহান আশরাফি, ডিএসকে; ম্যাক্স ফাউন্ডেশন এর ইকবাল আজাদ প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার সময় বাড়াল ডাকসু নির্বাচন কমিশন

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তা বরখাস্ত

টকশোতে বসে এনসিপি নেতা জানলেন তিনি বহিষ্কার

ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তথ্য জানালেন জেলেনস্কি

এশিয়া কাপের আগে ভারত দলে দুঃসংবাদ

দুই দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের

আ.লীগ নেতা এফএম শরীফুল গ্রেপ্তার

ছাত্রদলকে সুবিধা দিতেই মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় বৃদ্ধি : বাগছাস

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

ডাকসু নির্বাচন / ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে’

১০

এক ফ্যান এক বাতিতে বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা!

১১

চমক রেখেই বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচের প্রাথমিক দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার

১২

মাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল শিশু সন্তানেরও

১৩

মব সৃষ্টি করে বাধা, ছাত্রদলের অভিযোগের তদন্তে কমিটি গঠন 

১৪

গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর

১৫

মাভাবিপ্রবিতে বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিষয়ে সেমিনার

১৬

ছিনতাইয়ের ২ ঘণ্টার মধ্যে অটোরিকশা উদ্ধার

১৭

মিরসরাইয়ে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

১৮

মনোয়ারুল কাদির বিটুর নেতৃত্বে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ফুলেল শুভেচ্ছা 

১৯

৩২ নম্বরে ফুল দিতে এসে গ্রেপ্তার সেই রিকশাচালক কারামুক্ত

২০
X