সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় রাজধানীর ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে পৌঁছাবে। এর আগে দুপুর আড়াইটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) গোকুল ভি কের এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলে ইসকন সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীতে এ দিন দশটি স্থান থেকে পৃথক রথযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও মূল আকর্ষণ থাকবে ইসকনের রথযাত্রা উৎসবের ওপর। এরই মধ্যে এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম কর্তৃপক্ষ। শোভাযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা ইসকনের।
সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। এই রথযাত্রা সামনে রেখে গত বুধবার ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। সেখানে জানানো হয়, রথযাত্রা উপলক্ষে নয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকা। ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে আজ থেকে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পদাবলি কীর্তন, ধর্মীয় নাটকসহ নানা আয়োজন থাকছে। বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হবে রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে পৌঁছাবে। পরে আগামী ৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের শোভাযাত্রা একই পথে বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে। এর মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসব সমাপ্ত হবে।
চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, নির্বিঘ্নে রথযাত্রা অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং প্রশাসন সহযোগিতা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় নিজস্ব প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োজিত থাকবেন। সব মিলিয়ে আশা করছি, এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা হবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ইসকনের রথযাত্রা ছাড়াও রাজধানীতে এ দিন আরও নয়টি স্থান থেকে পৃথকভাবে রথ টানা হবে। সেগুলো হলো- দয়াগঞ্জ জেলেপাড়া কালীমন্দির থেকে দয়াগঞ্জ শ্রীশ্রী শিব মন্দির (রাজবংশী সংসদ); শ্রীশ্রী রামসীতা মন্দির-জয়কালি মন্দির থেকে পুনরায় জয়কালী মন্দির; শাঁখারীবাজার থেকে শ্রীশ্রী মাধব গৌড়ীয় মঠ-মন্দির (একনাম কমিটি); গোয়ালনগর থেকে আবার গোয়ালনগর (গোয়ালনগর একনাম কমিটি); তাঁতীবাজার থেকে পুনরায় তাঁতীবাজার (শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির); শ্রীশ্রী বঙ্কুবিহারি মন্দির থেকে পুনরায় বঙ্কুবিহারি মন্দির; শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী রোডের শ্রীশ্রী নরসিংহ জিউ মন্দির থেকে তনুগঞ্জ ইসকন মন্দির; লালবাগের পূর্ব ঋষিপাড়া শ্রীশ্রী রাধামাধব ও শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং বাসাবো কমলাপুর হাইস্কুল থেকে শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির।
ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে এ দিন রথযাত্রা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য মন্দিরেও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য করুন