কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অস্থির বাজারে নাভিশ্বাস ক্রেতার

বেড়েছে চাল-সবজির দাম স্বস্তি শুধু ডিম-মুরগিতে
অস্থির বাজারে নাভিশ্বাস ক্রেতার

চাল-সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার দুই সপ্তাহ ধরে অস্থির হয়ে আছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বেশি থাকলেও কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। একই অবস্থা চালের বাজারেও। বিশেষ করে মিনিকেট, ব্রি-২৮ ও পাইজাম চালের দাম ঈদের পর থেকে বাড়তি। তবে কিছুটা স্বস্তি মিলছে মুরগি, ডিম ও কিছু নিত্যপণ্যে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর, জোয়ারসাহারা ও সেগুনবাগিচা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে। করলা, বরবটি, কাঁকরোল, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দলের মতো সাধারণ সবজিও এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও যেসব সবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো, সেগুলোর দাম বেড়ে এখন দ্বিগুণের কাছাকাছি।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির মৌসুম শেষের দিকে থাকায় আড়তে দাম বেড়ে গেছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সরবরাহ কিছুটা কম। তা ছাড়া পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বর্তমানে বাজারে বেগুন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটোল ও পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন মৌসুম নয়—এমন কিছু সবজির দাম আরও বেশি। শিমের কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ধনেপাতা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে মিষ্টিকুমড়া, লাউ ও চালকুমড়ায়। এই সবজিগুলো এখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সবজির পাশাপাশি চালের বাজারেও বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ঈদের পর হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে এখন মিনিকেট চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৯২ টাকায়। ঈদের আগে এই চালের দাম ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। ব্রি-২৮ ও পাইজাম চালও বেড়ে কেজিতে এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। নাজিরশাইলের দাম ৮৪ থেকে ৯০ টাকা কেজি, স্বর্ণা (মোটা চাল) ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগের চাল বিক্রেতা সুমন আহমেদ জানান, ঈদের পর মোকামে চালের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মিনিকেট ও ব্রি-২৮ জাতের চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাদ্য বাজেট সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, আমিষজাতীয় পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির দাম ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, লাল লেয়ার ২৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজি ৬৫০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে।

মাছের বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২ হাজার ৪০০ টাকা। দেশি শিং ১ হাজার টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং চাষের রুই ও মৃগেল মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ি মাছ আকারভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, কাতলা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর কলিজা ও মাথার মাংস যথাক্রমে ৮০০ ও ৪৫০ টাকা এবং গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে আদা, রসুন, ডাল ও জিরার দামে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশি আদা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা এবং ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জিরার দাম কিছুটা কমে এখন কেজিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

পেঁয়াজ ও আলুর দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তেল, আটা, ময়দা, সুজি প্রভৃতি মুদি পণ্যের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। চিনির দামেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে। খোলা চিনি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১০৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৫ টাকা কমে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের মতে, একদিকে চাল, অন্যদিকে সবজির দাম বাড়ায় দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আগে যে টাকা দিয়ে দুই দিনের বাজার করা যেত, এখন এক দিনই হচ্ছে না। সবজি ও চালের দাম বাড়ায় মাসের খরচ বেড়ে গেছে অনেক।’

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত ঈদের পর সরবরাহ শৃঙ্খলায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। আড়তে দাম বাড়া এবং পাইকারি মোকামে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আমিনুল হক

ঢাকায় উদযাপিত হলো রাশিয়ান পতাকা দিবস

একাদশে ভর্তিতে কোনো শিক্ষার্থী পায়নি ৩৭৮ কলেজ

৫০ হাজারে শ্লীলতাহানির রফাদফা করলেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক

কে বেশি টাকা দেয়, ফেসবুক নাকি ইউটিউব

অর্ধ বিলিয়ন জরিমানা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প

মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে থানায় জিডি মহানগর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের

চাকরির নামে প্রতারণা, আমেরিকা প্রবাসী আটক 

শর্ত না মানলে ধ্বংস হবে গাজা সিটি : ইসরায়েল

নতুন করিডোর প্রকল্প শুরু করতে চায় চীন-পাকিস্তান

১০

থানা হাজতে যুবকের মৃত্যু, এএসআইসহ ৩ পুলিশ প্রত্যাহার

১১

চবিতে নিলস-সিইউ পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতা শনিবার

১২

জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন হয়নি, কারণ জানাল পুলিশ

১৩

বাদশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি মেয়র শাহাদাতের 

১৪

ঘুমাতে যাওয়ার কত আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত জেনে নিন

১৫

ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ছাত্রসমাজ রুখে দেবে : আ স ম রব

১৬

চমেকে ১০ চর্ম রোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ 

১৭

বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে : মাওলানা হালিম

১৮

আপনার শখের গাছের জন্য প্রাকৃতিক টনিক

১৯

শিগগির শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট : পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী 

২০
X