জয় নিশ্চিত হতেই বাতাসে কয়েকবার ঘুসি তানজিদ হাসান তামিমের। ৩৫ হাজার দর্শককে রীতিমতো স্তব্ধ করে রেখেছিলেন লিটন দাস-তানজিদরা। শব্দ করার আগেই যেন তাদের কণ্ঠ চেপে ধরত বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদের ব্যাটের ছোঁয়ায় বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়া এক একটা ছক্কা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এতটা চোখরাঙানো ব্যাটিং—অবিশ্বাস্য কিংবা অকল্পনীয় বললেও তো ভুল হওয়ার কথা নয়। অন্তত আগের দুই সিরিজ হারের ক্ষত মুছতে এতটুকু মলম তো দরকারই ছিল লিটনদের। একই সঙ্গে লঙ্কানদের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সিরিজ না জেতার আক্ষেপটাও ঘুচল অবশেষে; সেটাও আবার শ্রীলঙ্কার মাটিতেই। যে কোনো সংস্করণেই লঙ্কার মাটিতে যা প্রথম। ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হারিয়ে সুখকর স্মৃতি নিয়েই দেশে ফিরবেন তারা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে যেটা বাংলাদেশের পঞ্চম সিরিজ জয়।
কথায় আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বাংলাদেশের শেষটা ভালো হয়েছে বটে; কিন্তু সব কি আর ভালো হলো! টেস্ট সিরিজে ভালো শুরুর পরও ১-০ হার। ওয়ানডেতেও জেতার সুযোগ হাতছাড়া করে ২-১ ব্যবধানে হার। এবার টি-টোয়েন্টিতে এসে ২১ বল বাকি রেখে ৮ উইকেটের জয়—২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে স্বস্তিই বয়ে দিল বটে। লঙ্কানদের ১৩৩ রানের পুঁজি সহজেই পেরিয়ে গেলেন লিটনরা।
ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের আশপাশের রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। আগেই সব টিকিট বিক্রি হওয়ায় সেই চাপ পড়ে পুরো কলম্বো শহরের যান চলাচলেও। সন্ধ্যা ৬টা বাজার আগেই গ্যালারিতে ফাঁকা সিটের আর দেখা মিলছিল না। পিঁপড়ার মতো লাইন ধরে প্রবেশ করতে থাকেন লঙ্কান সমর্থকরা। এক স্থানীয় সাংবাদিক বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ হওয়ায় গ্যালারি ফাঁকা থাকবে না। ম্যাচ শুরুর আগেই সেটা দেখতেও পাবেন।’ তিনি যে ভুল বলেননি, সেটা টসের আগেই দেখা গেল মাঠেও।
প্রেমাদাসা বাংলাদেশকে হতাশ করে না। অন্তত টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। এই মাঠে গতকাল পর্যন্ত খেলা পাঁচ টি-টোয়েন্টির চারটিতেই জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এসে টানা নবমবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে টস হারলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। তবে টসভাগ্য পক্ষে না থাকলেও ম্যাচভাগ্য ঠিকই তার পক্ষে ছিল। সেটা বোলিংয়ের শুরু থেকেই দেখা মিলছিল প্রেমাদাসাতেই। একাদশে ফিরতেই স্পিন বিষে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নীল করে দেন অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। অথচ প্রথম দুই ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে জায়গা হারাতে হয়েছিল তার। মেহেদীর ৪ ওভারে ক্যারিয়ারসেরা ১১ রান খরুচে ৪ উইকেট—ম্যাচ জিততে আর কিই বা দরকার হয় লিটনদের! শেষ ওভারে তাই শরিফুল ইসলামের ২২ রান খরচও আর ব্যয়বহুল মনে হয়নি স্কোর কার্ডে।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আক্ষেপ আর হতাশার। শ্রীলঙ্কার গ্যালারিতে তখন উল্লাস-উচ্ছ্বাসও ছিল দেখার মতোই। ইনিংসের প্রথম বলেই আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউতে ফেরেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। পরের ছবিটা আর হয়তো কল্পনায়ও আনবেন না লঙ্কানরা। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কাজটা করে দেন লিটন ও তানজিদ হাসান। ৭৪ রানের জুটিতে ম্যাচের ফল কী হতে যাচ্ছে, তা নির্ধারণ হয়ে যায়। ৩২ রান করে লিটন ফিরে গেলেন কিছুটা হতাশ হয়েই। যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে পারেননি বলেই হয়তো। চারে নামা তাওহীদ হৃদয় একপাশ আগলে রেখেই রান তুলে গেছেন। অন্য পাশে থাকা তানজিদ ছিলেন বিধ্বংসী। সিরিজজুড়ে রানের যে আক্ষেপ ছিল তার, সেটা যেন মুছে দিলেন চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে। ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস—৬ ছক্কা ও এক চার। বাকিটা তো ম্যাচেই দেখা মিলল।
মন্তব্য করুন