নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ২২ ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের জট

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক
চট্টগ্রাম বন্দরের ২২ ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের জট

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্কের নতুন এই হার ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক আগের ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনার পর বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর এই ঘোষণা আসে। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে আগেভাগেই রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রপ্তানিকারকরা। তাতে চট্টগ্রামের ২২টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের জট তৈরি হয়েছে। চাপ সামলাতে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজারের বেশি কনটেইনার বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের তৃতীয় দফার বৈঠক শেষে গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণের কথা জানায়। হোয়াইট হাউসের এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ৭ আগস্টের পর যেসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে জাহাজে তোলা হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে নতুন হারে শুল্ক প্রযোজ্য হবে; অর্থাৎ ৭ আগস্টের আগে যেসব পণ্য জাহাজীকরণ হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সময় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১ মিনিট) পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এ সময়ের পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রগামী যেসব পণ্য তোলা হয়েছে, সেগুলোতে বসবে পাল্টা শুল্ক। চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে কনটেইনারবাহী পণ্য পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে।

সমুদ্রপথে রপ্তানি পণ্যের ৯৯ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নেওয়া হয়। এ জন্য রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে প্রথমে সরাসরি চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলোতে নেওয়া হয়। এরপর ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বন্দর দিয়ে মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই এভাবে রপ্তানি হয়।

কনটেইনার ডিপোর হিসাবে, সাধারণত প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রপ্তানি হয় ডিপোগুলো থেকে। তবে গত জুলাইয়ে চট্টগ্রামের বেসরকারি ডিপোগুলোতে ৯৯ হাজার কনটেইনার রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং রপ্তানি হয় ৮১ হাজার কনটেইনার। রপ্তানি না হওয়া বাকি ১৮ হাজার কনটেইনার এখন প্রতিদিন বন্দরে পাঠিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, হঠাৎ করে বাড়তি চাপ তৈরি হলেও ডিপোগুলো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করতে পারছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজারের বেশি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

শিপিং এজেন্টরা জানান, বন্দরে জাহাজজটের কারণে বাড়তি কনটেইনারের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার জেটিতে অবস্থানরত বেশিরভাগ জাহাজ কনটেইনার ওঠানামার কাজে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। তাতে সক্ষমতার বেশি কনটেইনার রপ্তানি করা যাচ্ছে না।

বন্দরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেল কার্গো বার্থ ও চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে অবস্থানরত ছয়টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে সময় লাগছে তিন থেকে চার দিন। শুধু নিউমুরিং টার্মিনালে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে সময় কম লাগছে গড়ে দুদিন।

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবর থেকে অনেক রাজ্যে শীত শুরু হবে। শীতের পোশাক রপ্তানি করতে হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠাতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের শঙ্কা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ১ আগস্টের আগে পণ্য রপ্তানির জন্য চাপ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের যাতে এসব চালানে পাল্টা শুল্ক দিতে না হয়, সেজন্য রপ্তানিকারকরাও নির্ধারিত সময়ের আগে পণ্য ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তানভীর বলেন, বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকরের আগে পণ্য পাঠাতে রপ্তানিকারকরা তাড়াহুড়ো করছেন না। অনেকেই এখন পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে। দীর্ঘ শিপমেন্ট সময় ও ক্রেতাদের দরদাম কৌশল বিবেচনায় নিয়ে অনেকে আগে থেকেই তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, অনেক মার্কিন ক্রেতা নতুন শুল্ক এড়াতে ৩১ জুলাইয়ের আগেই চালান পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন, যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি বেড়ে গিয়েছিল। এখন অনেক ক্রেতা নতুন অর্ডারে বাড়তি শুল্কের খরচ ভাগাভাগির প্রস্তাব দিচ্ছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশ পেরিয়ে কানাডায় ‘নয়া মানুষ’

৩৩ ওষুধের দাম কমলো, ১১৬ কোটি টাকা সাশ্রয়

জিমে ১২ লাখ ডলার খরচ করে নিলেন ৩০০ বছরের মেম্বারশিপ, অতঃপর...

ইমিগ্রেশনের ‘অনিয়মের’ সংবাদ প্রকাশের জেরে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

ডেঙ্গু আরও ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩২৫ 

চ্যাটজিপিটি-৫ নিয়ে বিতর্ক, নতুন মোডে আসছে ৩ পরিবর্তন

শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

হিমাগারে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ২

সাগরে লঘুচাপ, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম শিক্ষকদের

১০

কুয়েতে ১০ প্রবাসীর মৃত্যু

১১

নতুন গ্রাহকদের জন্য বিশাল ছাড় দিচ্ছে স্টারলিংক, পাবেন যেভাবে

১২

মাস্ক পরে নামাজ পড়া জায়েজ আছে?

১৩

ঘরের দরজা ভেঙে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৪

টাইমস স্কয়ারে প্রথমবার হবে দুর্গাপূজা

১৫

স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্স খাদে, স্ত্রীর মৃত্যু

১৬

বেকারি থেকে কেনা নাস্তায় মিলল সাপ

১৭

শেখ হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের তিন মামলায় বাদীদের সাক্ষ্য গ্রহণ

১৮

যতীন সরকার মারা গেছেন

১৯

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা নেই

২০
X