সজিব ঘোষ
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চলতি বছর আর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হবে না

ই-লাইসেন্স চলমান থাকবে
চলতি বছর আর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হবে না

চলতি বছর নতুন করে গ্রাহকদের হাতে আর স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দিতে পারছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। লাইসেন্স প্রিন্ট দেওয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে আর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট হবে না।

বর্তমানে বিআরটিএতে ছাপার অপেক্ষায় জমা আছে প্রায় সাত লাখ লাইসেন্স। আগামী ছয় মাসে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, লাইসেন্স ছাপানো বন্ধ থাকলেও আবেদন চলমান থাকছে।

বিআরটিএর সূত্র বলছে, কার্ডে লাইসেন্স ছাপানো না গেলেও ই-লাইসেন্স সরবরাহ চলমান থাকবে। পুলিশ যেন ই-লাইসেন্স আমলে নেয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

বিআরটিএর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবে মন্ত্রণালয় কেন আপত্তি জানিয়েছে, তা জানা নেই। তবে আগেও সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার নজির আছে। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে অন্তত ছয় মাসের আগে ঠিকাদার নিয়োগ শেষ হবে না।’

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘একটা কোম্পানি থাকতে আরেকটা কোম্পানি নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিলে চলমান কোম্পানির কাজের গতি কমে যেত। আমরা চেয়েছিলাম তাদের কাজগুলো সময়ের মধ্যে গুছিয়ে নিতে। আর আপাতত লাইসেন্স ছাপানো বন্ধ থাকলেও লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হবে না। ই-লাইসেন্সকে বৈধ

হিসেবে গণ্য করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’

এতদিন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর দায়িত্বে ছিল ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড (এমএসপি)। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৫ বছর মেয়াদে তারা এ কাজের দায়িত্বে ছিল। গত ২৮ জুলাই এমএসপির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়। ফলে ২৯ জুলাই থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ সব কাজ বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় এ প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার সময় তাদের নিয়মিত আবেদনের দিকে মনোযোগ দিতে বলা হয়। আর পুরোনো আবেদনের জট খোলার দায়িত্ব পায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত সেনাবাহিনী পরিচালনা করে।

সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ‘অনিবার্য কারণে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রম বন্ধ আছে’—এমন নোটিশ সাঁটানো আছে। ‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে লাইসেন্স-সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও সার্ভারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। ডাটাবেজে বিআরটিএর নিজস্ব কোনো অ্যাকসেস (প্রবেশাধিকার) নেই। এটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিআরটিএ সূত্র বলছে, সমস্যার সমাধানে তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সার্ভারের নিয়ন্ত্রণসহ ডাটাবেজের অ্যাকসেস নিজেদের হাতে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কাজ করছি। আপৎকালীন গ্রাহকদের কীভাবে সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে।

এদিকে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, পাঁচ বছরে ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড দেওয়ার কথা। শর্ত অনুযায়ী পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ৫০ হাজার কার্ড এবং অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আরও ৫০ হাজার কার্ড মজুত থাকতে হবে। চুক্তির মূল্য ছিল ১২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি কার্ডের জন্য ঠিকাদারকে প্রায় ৩০০ টাকা দিতে হতো বিআরটিএকে। কিন্তু বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, পাঁচ বছরে ৩৩ লাখের মতো আবেদন জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক লাইসেন্স পেয়েছেন। বাকি ৭ লাখ এখনো পাননি। অর্থাৎ এ ৭ লাখ লাইসেন্স প্রিন্ট করতেই পারেনি ঠিকাদার। তার আগেই চুক্তির মেয়াদ শেষ।

বিআরটিএর একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কখনোই চুক্তি অনুযায়ী সেবা দিতে পারেনি। কার্ডের সংকট ছিল নিয়মিত, ফলে সময়মতো গ্রাহকদের হাতে লাইসেন্স পৌঁছায়নি। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৮ হাজার কার্ড সরবরাহের লক্ষ্য থাকলেও কার্ডের সংকটের কারণে কোনো দিনই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি ঠিকাদার।

২০১১ সালে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করে বিআরটিএ। শুরুতে বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্পে যুক্ত ছিল টাইগার আইটি। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আবারও ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের দায়িত্ব পায় টাইগার আইটি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত হওয়ায় ২০১৯ সালের আগস্টে টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। তারপর নতুন টেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও চুক্তির মেয়াদ ২০২১-এর জুন পর্যন্ত স্মার্ট কার্ডের সার্ভার এবং ডাটাবেজ হস্তান্তরে গড়িমসি করে টাইগার আইটি। তাদের মেয়াদ শেষে প্রায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্সের আবেদন ঝুলে থাকে। ডাটাবেজ হস্তান্তর নিয়েও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এবার মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স একইভাবে ডাটাবেজ নিজের দখলে রেখেই বিদায় নিয়েছে।

জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক কালবেলাকে বলেন, বিআরটিএর অপেশাদার আচরণের কারণে বছরের পর বছর ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংকট মিটছে না। দায়িত্বশীলরা সুবিধা ভোগ করেন; কিন্তু কোনো জবাবদিহি নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও স্বচ্ছ হওয়া দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাতা না ঠোঁট কোনটি আগে দেখলেন, উত্তর মিলিয়ে জেনে নিন আপনার ব্যক্তিত্ব

কেন আমোরিমকে এখনও বরখাস্ত করছে না ম্যানইউ?

ফিলিপাইনে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির আশঙ্কা

ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় জামায়াত নেতা বহিষ্কার

৪৫ নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদানের খবরের প্রতিবাদ জামায়াতের

গাজার ২০০ নটিক্যাল মাইলের ভেতরে প্রবেশ করল ত্রাণবাহী নৌবহর

চীন বিষয়ক সংবাদের জন্য গোল্ডেন সিল্ক রোড অ্যাওয়ার্ডস

দুই ট্রলারসহ ১৪ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

নিবন্ধন পেল এনপিবি নিউজ

ট্রফি নিয়ে টানাপোড়েন: এসিসি বৈঠকে মুখোমুখি বিসিসিআই-নকভি

১০

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ৬৫ পদে নিয়োগ, আবেদন যেভাবে

১১

বিএনপি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে : ব্যারিস্টার অসীম

১২

বাঁশ বাগানে কান্নার শব্দ, খুঁজতে ‍গিয়ে যা দেখা গেল

১৩

শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক ইয়ুথ ক্লাবকে হস্তান্তর, ডিএনসিসিকে আইনি নোটিশ

১৪

বরিশালে একদিনে ডেঙ্গুতে ৩ মৃত্যু

১৫

প্রতারক থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ ফায়ার সার্ভিসের

১৬

‘ইয়াং লাইফ’ বিউটি পার্লারের মালিক শান্তার মরদেহ উদ্ধার

১৭

লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ৫০০ প্ল্যান্ট স্থাপন করবে পিকেএসএফ

১৮

মারধরের মামলায় এএসপি নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে সমন জারি 

১৯

টানা পাঁচদিন পর রাজশাহীতে দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার

২০
X