

গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ হয়েছে। সংঘাত থামাতে চুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠকের আগে শনিবার তেল আবিবে হাজারো ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেন। হামলা বন্ধ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানাচ্ছে বিশ্ববাসী। তবুও থামছেই না গাজায় হামলা। গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর—ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৬৬ হাজার।
যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে সমবেত হয়ে একটি বড় ব্যানার প্রদর্শন করেন। এতে লেখা ছিল—সব বন্দিকে এখনই ঘরে ফিরিয়ে আনো। গাজায় বন্দি থাকা ওমরি মিরানের স্ত্রী লিশাই মিরান-লাভি বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধ করার এবং সব বন্দি ও সেনাকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত চুক্তিই শুধু এই ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।’ তিনি ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ওপর আপনার প্রভাব খাটান। এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, ওমরি ও অন্য বন্দিদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।’
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। যদিও ট্রাম্প গাজা নিয়ে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি গাজা চুক্তি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটি একটি চুক্তি, যা বন্দিদের ফিরিয়ে আনবে ও যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।’
গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামানোর দাবিতে গতকাল জার্মানি, ইতালি, আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রতিবাদী কর্মসূচি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। গাজায় হামলা বন্ধে দেশে-বিদেশে চাপ থাকলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। দেশটির সামরিক বাহিনী ক্রমেই অভিযান জোরদার করছে। বর্তমানে উদ্ধার অভিযানের সুযোগ দিচ্ছে না। এতে অনেক আহতও চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে অন্তত ১০ জন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এবং গাজা সিটিতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ৯১ ফিলিস্তিনি।
এদিকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে অপুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে মাত্র আড়াই মাস বয়সী শিশু ঈদ মাহমুদ আবু জামা মারা গেছে বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল। আলজাজিরার সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অবকাঠামো, ঘরবাড়ি ও পুরো পাড়া-মহল্লা ধ্বংস করছে। এতে আহতদের কাছে পৌঁছানো বা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চিকিৎসা দলগুলোর কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে। এদিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৬ হাজার ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৬২ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষের লাশ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন