

মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সড়ক অবরোধের কারণে গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর আগারগাঁও, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ ও শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে নগরের অন্য এলাকার সড়কগুলোতেও। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজারো মানুষকে। অফিস শেষে অনেককে বাধ্য হয়ে হেঁটে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে।
অননুমোদিত মোবাইল ফোন বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীরা। ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ-এর’ ব্যানারে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নিলে একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে আগারগাঁও এলাকার সব সড়ক বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে শ্যামলী, আগারগাঁও ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক ভবনের পাশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করলে হাইকোর্টের মাজার রোড, সচিবালয়ের সামনের সড়কসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ‘স্কুলিং কাঠামো’ বাতিলের দাবিতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গতকাল সকালে ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আধা ঘণ্টা বিক্ষোভ করে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
আগারগাঁওয়ে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধের কারণে সৃষ্ট যানজটে পড়ে ওই এলাকায় থাকা তিনটি প্রধান বিশেষায়িত হাসপাতালে (শিশু, পঙ্গু ও নিউরো সায়েন্সেস) রোগীদের ঢুকতে-বের হতে বেগ পেতে হয়। রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁও মোড় থেকে বিটিআরসি ভবনের সামনে পর্যন্ত অন্তত চার জায়গায় আগুন জ্বালান বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ব্যবসায়ীরা রাস্তার এক পাশ ছেড়ে দিলেও বিটিআরসির সামনের সড়কে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
গতকাল বিকেলে নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, যানজটে থমকে আছে সব যানবাহন। হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে সমানে সাইরেন বাজিয়ে চললেও বের হতে পারল না একটি অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটির চালক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। যানজটের কারণে নেওয়া গেল না।
স্কুল শিক্ষক হোসনে আরা ফিরছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। যানজটের কারণে অনেকক্ষণ অটোরিকশায় বসে থাকার পর বের হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। হোসনে আরা জানান, হাঁটুতে সমস্যা থাকায় তিনি ভালো করে হাঁটতে পারেন না। বাসা থেকে ছেলেকে আসতে বলেছেন। ছেলে আসছে; তিনিও যতখানি পারেন সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পাসপোর্ট অফিসের উল্টোপাশের মোড়ে ৫০-৬০ জন বিক্ষোভকারীকে দেখা যায় সড়ক অবরোধ করে রাখতে। তাদের পেছনে ছিল কয়েকশ গাড়ি আর মোটরসাইকেল। বাইকাররা মাঝে মাঝেই উত্তেজিত হয়ে একযোগে হর্ন বাজাচ্ছিলেন; কিন্তু আন্দোলনরতা তাতে ভ্রুক্ষেপই করেননি।
তেলের লরি চালক মিরাজ জানান, বিকেলে গাবতলী যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এক জায়গাতেই আটকে আছেন। মোটরসাইকেলগুলো ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হতে পারলেও তিনি যেতে পারছেন না। তার হেলপার সিয়াম অনেকক্ষণ আগে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। তখন তারা জানিয়েছিলেন, বিকেল ৫টায় আন্দোলন শেষ হবে। কিন্তু সাড়ে ৫টার সময়ও তারা রাস্তা ছাড়েনি।
এক পর্যায়ে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও মোটরসাইকেল আরোহীদের দেখা যায় আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে তাদের গালাগাল করছেন। জবাবে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বারবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় না জড়ানোর জন্য। তাদের নেতাগোছের একজন হ্যান্ড মাইক হাতে বলছিলেন, ‘আমরা কিচ্ছু দেখি না। আমরা কিচ্ছু শুনি না। যে যাই বলে বলুক, আপনারা কারও সঙ্গে হাতাহাতি করবেন না।’
তীব্র যানজটের কারণে অফিস শেষে অনেককেই ব্যাগ হাতে হেঁটে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে। এ সময় কেউ কেউ ক্ষোভে ফুঁসছিলেন এবং সরকারকেই দোষারোপ করছিলেন। তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্বল প্রশাসন নীতির কারণে এখন যে যেভাবে পারছে আন্দোলন করছে। কেউ আবার স্ত্রী-বাচ্চা কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে অপেক্ষা করছিলেন।
এদিকে শাহবাগ ও শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-অবরোধের কারণে যানজটে আটকে থাকা এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘বলা নেই, কওয়া নেই হুট করে রাস্তা বন্ধ। এভাবে ভোগান্তি করার মানে হয় না।’
শিক্ষা ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা পাঁচ ঘণ্টা ধরে কর্মসূচি চালালেও শাহবাগ অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা অবশ্য ঘণ্টাখানেক পরেই সড়ক ছেড়ে চলে যান।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান গতকাল দুপুরে বলেন, শিক্ষার্থীরা শাহবাগের সড়ক ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে শিক্ষা ভবনের সামনে কিছু শিক্ষার্থী এখনো অবস্থান করায় সেখানে যানজট রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
পরে বিকেল ৫টার পর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করলে আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মন্তব্য করুন