প্রকৃতি নিরাশ করেনি হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের। মৌসুমের শেষ তিথি শুরুর এক দিনের মধ্যেই দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হ্যারিটেজ হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। মুহূর্তেই মলিন মুখে হাসি ফুটেছে ডিম সংগ্রহকারীদের। দুই মাস অপেক্ষার পর আশানুরূপ ফল পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
এর আগে গত শনিবার থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত নমুনা ডিম ছাড়ার খবর পাওয়া যায়। তবে রোববার রাত ১১টার দিকে জোয়ারের সময় পুরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। জোয়ার শুরুর আগে থেকেই বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অবস্থান করছিলেন শত শত ডিম সংগ্রহকারী। নদীর আমতুয়া এলাকা থেকে ডিম আসা শুরু করে সংগ্রহকারীদের জালে। পরে নাপিতের ঘাট, আজিমের ঘাট, পোড়া আওলিয়া টেক, কাটাখালীর মুখ, বোবাইয়ার চর এবং সবশেষে গড়দুয়ারা নয়াহাট কেরাংতলি বাঁক এলাকায় ডিম ধরা পড়ে। সবচেয়ে আশার কথা, দেরি করে হলেও এবার রেকর্ডসংখ্যক ডিম ছেড়েছে মা মাছ, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে বেশি।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, রাতে প্রতিবারই ডিম এসেছে জাল ভরে; কিন্তু এত ডিম সংরক্ষণের কুয়া না থাকায় কুয়ার পরিমাণ ডিম নিয়ে নদী থেকে উঠে গেছেন তারা। প্রচুর ডিমের কারণে পুরো নদীতে ফেনা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালেও জালে ডিম ধরা পড়েছে। এমনকি নৌকা বাঁশের ভোরকায়ও ডিমের অস্তিত্ব লক্ষ করা গেছে। ডিম সংগ্রহে অভিজ্ঞ লোকমান, আবু তৈয়্যব, মাহবুব, কামাল সওদাগর, শফি, হোসেন ও নুরুল হক কালবেলাকে বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিরাশ করেননি। এত পরিমাণ ডিম পাওয়া অকল্পনীয় ছিল। তাদের অভিযোগ সংরক্ষণের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়ে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হ্যাচারি মাছুয়াঘোনায় ৫০টি কুয়ায় ৪০ কেজি করে দুই হাজার, শাহমাদারিতে ৪৫টি কুয়ায় ১ হাজার ৮০০, মদুনাঘাটে ৩০টি কুয়ায় ১ হাজার ২০০ কেজি করে ডিম সংরক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি রাউজান উপজেলার মোবারকখীল হ্যাচারিতে ১৬ কুয়ার প্রতিটিতে ১ হাজার ১৭০ কেজি করে ডিম সংরক্ষণ করা হয় রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক মায়েদুজ্জামান বলেন, রাত থেকেই হালদায় অবস্থান করছি। এবার রেকর্ডসংখ্যক ডিম ছাড়লেও, পর্যাপ্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সব ডিম সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি।
এদিকে বড়ুয়াপাড়া সরকারি হ্যাচারিতে গতকাল সোমবার সকালেও অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়নি ডিম ফোটানোর অনেক কুয়া।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে থাকায় শেষ জোঁতে এসে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গত রোববার অমাবস্যা শেষ হওয়ায় ওইদিন রাত ১১টায় প্রথমে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ে মা মাছ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসন হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে। এটা তাই বিরাট সাফল্য।
দুই উপজেলার সরকারি হ্যাচারি ছাড়াও অনেক বেসরকারি হ্যাচারি ও মাটির কুয়ায় ডিম সংরক্ষণ করেন কিছু সংগ্রহকারী।
এ প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলি কালবেলাকে জানান, মাটির কুয়া, সরকারি, বেসরকারি হ্যাচারি মিলিয়ে সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে। সঠিক তথ্য পেতে কাজ করতে সরকারি হ্যাচারির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন