আটলান্টিক মহাসাগরে পর্যটকবাহী জাহাজ টাইটানিক ডুবে গেছে শত বছর আগে। তা সত্ত্বেও এই জাহাজ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সাগরের তলদেশে কী অবস্থায় আছে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। গবেষকরা প্রায়ই নতুন ছবি প্রকাশ করে মানুষের কৌতূহলকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সেই কৌতূহল মেটাতে একদল পর্যটক সাবমেরিনে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার উদ্দেশ্যে গত রোববার রওনা দেন। কিন্তু রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাবমেরিনটি নিখোঁজ হয়ে যায়। উদ্ধারকারী দল সাগরে সন্ধান চালালেও এখনো তাদের হদিস মেলেনি। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, পর্যটকবাহী সাবমেরিনটিতে আর মাত্র ৭২ ঘণ্টার অক্সিজেন রয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, ডুব দেওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সাবমেরিনটি। হারিয়ে যাওয়া ডুবোযানটির নাম টাইটান। ট্যুর অপারেটর ওশানগেট বলেন, টাইটানে থাকা পাঁচ আরোহীকে উদ্ধারের সম্ভাব্য সব পথই তারা খতিয়ে দেখছেন। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সমুদ্রে কাজ করা বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে। কিন্তু হাতে খুব একটা সময় নেই। টাইটানের অক্সিজেন কমছে। ফলে যা করার এর মধ্যে করতে হবে।
কানাডার নিউ ফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের সেন্ট জন শহর থেকে টাইটান যাত্রা শুরু করে। আটলান্টিকের তলদেশে যেখানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, সেখান থেকে দূরত্ব ৬০০ কিলোমিটার। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে
ঘুরিয়ে আনতে সাবমেরিনটির সময় লাগত প্রায় আট ঘণ্টা। সাগরের ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখাসহ আট দিন ভ্রমণের জন্য টিকিটের দাম দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারে।
নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও অভিযাত্রী হামিশ হার্ডিং। গত রোববার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দেন, অবশেষে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন এবং সেজন্য তিনি গর্বিত। অন্য পর্যটকরা হলেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ এবং তার ছেলে সুলেমান।
পর্যটন সংস্থা ওশানগেট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, টাইটানে চড়ে টাইটানিক দেখতে যাওয়ার এই অভিযাত্রা দৈনন্দিন জীবনের বাইরে পা রাখার এবং সত্যিই অসাধারণ কিছু আবিষ্কার করার এক দারুণ সুযোগ। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের জুনে আরও দুটো অভিযাত্রার পরিকল্পনার কথা তাদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছিল। টাইটানে সাধারণত একজন পাইলট, একজন কনটেন্ট এক্সপার্ট এবং তিনজন পর্যটক থাকেন। নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে পর্যটকদের এবং টাইটানকে আটলান্টিকের নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যায় পোলার প্রিন্স নামে একটি জাহাজ। সেখান থেকে টাইটানিক দেখানোর জন্য যাত্রী নিয়ে ডুব দেয় এই সাবমারসিবল।
ওশানগেটের মালিকানায় তিনটি সাবমারসিবল থাকলেও কেবল টাইটানই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে পৌঁছানোর মতো গভীরে ডুব দিতে সক্ষম। এ ডুবোজাহাজটি ২০১৭ সাল থেকে টাইটানিকের কাছে যাওয়ার অভিযান শুরু করে। তবে এটি প্রথমবার সফল হয় ২০২১ সালে। এটি কার্বন ফাইবারের তৈরি। টাইটানের দৈর্ঘ্য ৬.৭ মিটার, প্রস্থ ২.৮ মিটার এবং উচ্চতা ২.৫ মিটার। এটির ওজন ১০ হাজার ৪৩২ কেজি। এটি ১৩ হাজার ১০০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় পৌঁছতে পারে এবং পাঁচজন আরোহীর জন্য ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। গত বছর টাইটানে চড়ে ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছিল সিবিএস টেলিভিশনের সাংবাদিক ডেভিড পোগের। তিনি বলেন, পানির নিচে জিপিএস বা রেডিও কাজ করে না। ফলে সাবমারসিবল আর জাহাজের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রসঙ্গত, ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় সে সময়ের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক। এতে দেড় হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। দুই টুকরো হয়ে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে আটলান্টিকের নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে বহু সংস্থা এ নিয়ে গবেষণা করেছে এবং করছে।
মন্তব্য করুন