জ্বালানি খাতে স্বল্পমেয়াদি একশ দিনের কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কূপ খননের পাশাপাশি পাইপলাইন নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও আমদানি, কয়লার উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা একশ দিনের এই পরিকল্পনা তৈরি করে সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে জমা দিয়েছে। পেট্রোবাংলা ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স) মো. কামরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা একশ দিনের একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। এতে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনার কিছু কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৪৬টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আগামী একশ দিনের মধ্যে কূপ খনন করতে তিনটি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করবে পেট্রোবাংলা। এই তিন কোম্পানি ১৭টি কূপ খনন করবে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে চীনের সিনোপ্যাক, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম এবং উজবেকিস্তানের এরিয়েল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশীয় কোম্পানির সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ, বাপেক্সের একার পক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে সব কূপ খনন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অভিজ্ঞ বিদেশি কোম্পানি দিয়ে নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, ৪৬ কূপের মধ্যে চারটি খনন করা হবে বেশি গভীরতায়। অর্থাৎ ডিপ ড্রিলিং। মাটির অনেক গভীরে হার্ড রক বা পাথর রয়েছে। এই পাথর ভেদ করে মাটির নিচে কী রয়েছে, তা এখনো আমাদের দেশে দেখা হয়নি। নতুন এই চারটি কূপ খনন করলে ওই স্তরে কী রয়েছে, তাও জানা যাবে। এসব কূপ সিলেটে অবস্থিত।
এ ছাড়া বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর পাইপলাইন নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ নিশ্চিত করা, পাইপলাইনের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ, মহেশখালী-মাতারবাড়ী উচ্চ চাপের ৫২ ইঞ্চি ব্যাসের ২৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণে সরকারের সম্মতি আদায়, জিটিসিএলের বিভিন্ন পাইপলাইন নির্মাণে দাতাদের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির চেষ্টা করা, শাজবাজপুর এবং ভোলা নর্থ থেকে বরিশাল পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণে ফিজিবিলিটি শেষ করার কথা আছে পরিকল্পনায়।
কক্সবাজার মাতারবাড়ি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণে জায়গা চূড়ান্ত করা, ভারত থেকে এলএনজি আমদানির জন্য এইচ এনার্জির সঙ্গে খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করা, মহেশখালী তৃতীয় ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে সামিটের সঙ্গে খসড়া চুক্তি সই, দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির জন্য সামিটের সঙ্গে পৃথক আরও একটি চুক্তির খসড়া সই, দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির জন্য পেরিন্টিস মালয়েশিয়ার সঙ্গে খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে। একশ দিনের মধ্যে তিতাস গ্যাসের জন্য বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ, এডিবির সাড়ে ৬ লাখ, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিশ্বব্যাংকের ১ লাখ ২৮ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া বড়পুকুরিয়ার সম্প্রসারিত অঞ্চল থেকে কয়লা তোলার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি আদায় এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ভোলার পর এবার সিলেটের জকিগঞ্জ থেকেও সিএনজি করে গ্যাস আনার চিন্তা চলছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় বিশেষ আইন-২০১০-এর অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায়।
এদিকে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলার মতো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও (বিপিসি) একশ দিনের একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। এতে আগামী একশ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।