কালো পেড়ে সাদা শাড়ি ও কালো পাঞ্জাবি পরা একদল কিশোর-কিশোরী ঘুরছে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাঙ্গণের এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। কয়েকজনকে দেখা গেল অনিন্দ্য প্রকাশনীর স্টলে দাঁড়িয়ে আছে। একজন মুস্তাক আহমেদের একটি সাইকোলজি থ্রিলার উপন্যাসের বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম তাদের সঙ্গে কথা বলতে। জানতে চাইলাম এত সকালে তারা বইমেলায় কেন? কলেজ শিক্ষার্থী রাইসুর ইসলাম রায়হান বলেন, আসলে আমরা ভোরে এসেছিলাম শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। তারপর চিন্তা করলাম বইমেলা যেহেতু চলছে কিছু বই দেখে যাই।
কলেজ শিক্ষার্থী মহিনউদ্দিন রাশেদ বাসাব থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছেন ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টল-প্যাভিলিয়নে। রাশেদ বলেন, শ্রদ্ধা জানানো শেষে বইমেলায় ঘুরতে এলাম। লেখক মুস্তাক আহমেদের প্যারা সাইকোলজি বই ‘জোছনা ছায়া’ কিনলাম।
গতকাল বুধবার ছিল মহান শহীদ দিবস। শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বইমেলায় দর্শনার্থী ও পাঠকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রকাশকরা জানান, আজ (বুধবার) এই বইমেলার ২৯ দিনের সেরা দিন। প্রতিবারই এই দিনে রেকর্ড পরিমাণ বই বিক্রি হয়। গ্রন্থিক প্রকাশনীর প্রকাশক রাজ্জাক রুবেল বলেন, আজকের দিনটি প্রকাশকদের কাছে চাঁদ রাতের। কারণ, অন্যদিনের তুলনায় এদিন ১০ গুণ বেশি বই বিক্রি হয়।
অমর একুশে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন শিক্ষিকা ও কবি অগ্নিশিখা দীপান্বিতা। মেলায় তার একটি কবিতার বই ‘তবুও ভালোবাসব’ প্রকাশিত হয়েছে অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে। তিনি কালবেলাকে বলেন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাভাষী প্রত্যেক মানুষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রদ্ধার। এই বইমেলায় আসতে পারাটা আমার খুব দরকার ছিল। বাংলাদেশের বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছিলামÑ এখানকার তরুণ সমাজ বই বিমুখ। কিন্তু সেই কথা যে সত্য নয়, তা বইমেলায় এসে বুঝতে পারলাম। দেখলাম বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী মেলা থেকে গদ্য, উপন্যাস ও কবিতার বই কিনছে।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক অদিত্য অন্তর বলেন, আজ (গতকাল) মেলায় ব্যাপক ভিড় ছিল। মেলায় ভিড় থাকলে বিক্রিও ভালো হয়। তবে একটু ভোগান্তিও হয়। মানুষ প্যাভিলিয়নের সামনে সেলফি তুলতে ভিড় করে, বই এলোমেলো করে। কিন্তু কিনে খুব কম মানুষ। তবু আমরা চাই মানুষ মেলায় আসুক, বইয়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটুক।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৩৪টি। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা-২০২৪। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, শিশু সাহিত্যিক ওয়াসিফ এ খোদা, কথা সাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ ও শিশুসাহিত্যিক ইমরান পরশ। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেল ৫টায় ‘প্রথম কবিতার বই: অনুভূতির দলিল এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন আশনা হাবিব ভাবনা, সিগ্ধা বাউল, সঞ্জয় ঘোষ, রিপন আহসান রিতু, মীর রবি, মাশরুরা লাকী ও মিনহাজুল হক। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন কবি ফারহান ইশরাক ও কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, আমিনুর রহমান সুলতান, হাসানাত লোকমান, বদরুল হায়দার, ফারহানা রহমান, সঞ্জীব পুরোহিত, নূর-এ-জান্নাত, শিমুল পারভীন ও আরেফিন রব। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী ও আহ্কামউল্লাহ। এ ছাড়া ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী ও মানজারুল ইসলাম সুইটের পরিচালনায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কল্যাণী ঘোষ, শিবু রায়, মহাদেব ঘোষ, মিথুন জব্বার, বাবু জব্বার, আব্দুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মণ্ডল ও জান্নাত-এ-ফেরদৌসী।