আতাউর রহমান
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৬ হাজার ‘অন্ধ’ সড়কবাতি ঘিরে ঢাকার ছিনতাই স্পট

ঢাকার দুই সিটি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাতের রাজধানীকে আলোকিত রাখতে মূল সড়ক ও অলিগলিতে স্থাপিত সড়কবাতির বেশির ভাগই নষ্ট। এ কারণে অন্ধকার হয়ে থাকে ওইসব সড়ক। সেই সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীসহ অপরাধীরা। নষ্ট এসব সড়ক বাতির আশপাশেই ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের স্পট বানিয়ে রেখেছে। পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিগগির এসব সড়কবাতি মেরামতের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে থাকা সড়ক বাতির মধ্যে ২ হাজার ২৬৫টি নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে ৩ হাজার ৬৬৫টি সড়কবাতি।

ডিএমপির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে চলমান বিশেষ অভিযান চালাতে গিয়ে তারা দেখতে পান, মূলত যেসব সড়কে অন্ধকার এবং যেখানে সড়কবাতি জ্বলে না, সেখানেই রাতে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ হচ্ছে। ছিনতাইকারীরা এসব জায়গায় ওতপেতে থাকছে। এরপরই তারা কতটি বাতি নষ্ট, তা খুঁজতে থাকেন। গত শনি ও রোববার রাতে গণনা করা হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দুই সিটিতে ৫ হাজার ৯১৯টি সড়কবাতি নষ্ট পাওয়া গেছে। পুরোপুরি গণনা করা শেষ হলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল কালবেলাকে বলেন, যেসব এলাকায় সড়ক বাতি নষ্ট রয়েছে, সেসব এলাকা অন্ধকার থাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। এ জন্য নষ্ট বাতিগুলো মেরামতের জন্য দুই সিটির মেয়র বরাবর তারা চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান চলছে। সব অংশীজন সংস্থাগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করলে এবং নাগরিকরা সতর্ক থাকলে ছিনতাইসহ এ ধরনের অপরাধ একেবারেই কমানো সম্ভব। ডিএমপি সবার সহযোগিতায় সে চেষ্টাই করছে।

ডিএমপির বিভিন্ন ক্রাইম বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনি ও রোববার রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ডিএমপির চারটি ক্রাইম বিভাগের পক্ষ থেকে যাচাই করে দেখেছে, রমনা বিভাগের সড়ক ও অলিগলিতে ১৬৪টি সড়কবাতি নষ্ট রয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিল বিভাগে ৫৫৮টি, লালবাগ বিভাগে ৫২৮টি এবং ওয়ারী বিভাগে ১ হাজার ১৫টি সড়কবাতি নষ্ট রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ডিএমপির চারটি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে মিরপুর বিভাগে ১৩৭টি, উত্তরা বিভাগে ১৬১, তেজগাঁও বিভাগে ৪৯২ ও অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান বিভাগে সর্বাধিক ১ হাজার ৪৬৪টি সড়কবাতি নষ্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ডিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু এসব স্পটেই ছিনতাই হচ্ছে না, বিশেষ অভিযান চালাতে গিয়ে তারা দেখেছেন ঢাকার বাইরে থেকে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শেষ রাতে যাত্রীবাহী বাসগুলো ঢাকায় ঢুকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। ওই সময় বাস কোম্পানির কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীরা সেখানে বসতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে ভোর হওয়ার আগেই তারা বাসায় যাওয়ার পথে এবং রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, কাউন্টারগুলো যাতে সকাল পর্যন্ত খোলা থাকে, ঢাকায় প্রবেশের পর যাত্রীরা যাতে বাস থেকে নেমে সকাল হওয়া পর্যন্ত কাউন্টারে নিরাপদ অপেক্ষার সুযোগ পান, সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারগুলোতে তারা চিঠি দেবেন।

গত ১ জুলাই ভোরে রাজধানীর ফার্মগেটে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন পুলিশ কনস্টেবল কাজী মনিরুজ্জামান। এরপর থেকে পুলিশ রাজধানীজুড়ে ছিনতাইকারী, দস্যু ও ডাকাত সদস্যদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল কালবেলাকে বলেন, টানা ওই অভিযানে গত ৯ দিনে ৫৫৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা গেছে। তাদের অনেকে আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। এমন ছিনতাইকারীও পাওয়া গেছে, ৮ বার গ্রেপ্তার হয়েও কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ এই অভিযানে ছিনতাইকারী গ্রুপগুলোর চেইন ভেঙে দেওয়া গেছে। এ ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি কর্মকর্তারা জানান, ‘সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা এসআইভিএস’ নামে সফটওয়্যারের তথ্য ভান্ডারে থাকা তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় ৬ হাজার ১৯৮ জন ডাকাত ও ছিনতাইকারী রয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাই এবং ৪ হাজার ৪৬১ জন ডাকাতিতে জড়িত। ওই তথ্য ভান্ডারে জড়িত ব্যক্তিতদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্তও রয়েছে। চলমান অভিযানে দেখা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের নাম আগেও ওই তথ্যভান্ডারে রয়েছে। অর্থাৎ এরা আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল।

এসআইভিএস তথ্য ভান্ডারের হালনাগাদে যুক্ত পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত পাঁচজনের কম দুর্বৃত্ত পথ আটকে অস্ত্রের মুখে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান মালপত্র নিয়ে নিলে তা ছিনতাই বা দস্যুতা হিসেবে মামলা হয়। পাঁচজন বা তার বেশি থাকলে ডাকাতির মামলা দেওয়া হয়ে থাকে। সেভাবেই তথ্য ভান্ডারে অপরাধের ধরন উল্লেখ করে হালনাগাদ করা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাকরিচ্যুত

টাকা বাঁচাতে লেভানদোভস্কিকে গোল করতে মানা করেছিল বার্সা!

মুক্তিযুদ্ধকে বিএনপির মতো অন্য কোনো দল ধারণ করে না: শামা ওবায়েদ

মুশফিকের শততম টেস্টে হামজার বিশেষ বার্তা

ভারতকে হারিয়ে ফিফা থেকে সুখবর পেল বাংলাদেশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের কবলে বিচারক, খোয়ালেন মোবাইল-চশমা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছোট কাজে বড় অনিয়ম

লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল / ১০ বছরের করমুক্ত সুবিধা পাবে দুই বিদেশি কোম্পানি

রামপুরায় বাসে আগুন

যুবদলের পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

১০

আসামি ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা, যুবক গ্রেপ্তার

১১

এবার ‘রাজসাক্ষী’ হয়ে আরেক পুলিশ সদস্যের জবানবন্দি

১২

দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ আ.লীগের ৮ নেতাকর্মী কারাগারে

১৩

নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাবিতে নৌবহর কর্মসূচি

১৪

সময় টিভির চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলামের পদত্যাগ

১৫

ইতালি নেওয়ার লোভ দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে তিন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা

১৬

জানা গেল বিপিএল নিলামের নতুন তারিখ

১৭

রোজা শুরু হতে আর কত দিন বাকি? জেনে নিন

১৮

ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতি / বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঐক্য পরিষদ

১৯

আবারও বিপিএল নিলাম নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০
X