মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে কোনোরকম জরিমানা ছাড়াই খালাস হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা চিহ্নিত হওয়ার পর অভিনব কৌশলে পণ্যের ভ্যালু বাড়িয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ এলিনা অটো বাইক ইন্ডাস্ট্রিজের একটি পণ্য চালান শুল্ক গোয়েন্দা আটকে দেওয়ার পরও কোনো শুনানি বা বিচারাদেশ ছাড়াই ভ্যালু বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ডেমরার এলিনা অটো বাইক ইন্ডাস্ট্রিজ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে অটো বাইকের একটি পণ্য চালান নিয়ে আসে। এই পণ্য চালানে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আর কায়িক পরীক্ষায় ঘোষণার চেয়ে বেশি এবং ঘোষণার বাইরেও অনেক পণ্য পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে মিথ্যা ঘোষণায় মামলা দায়েরের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পাঠায়। কিন্তু আচমকা ২০ ফেব্রুয়ারি কোনো ধরনের শুনানি বা বিচারাদেশ না করেই ফোর্স মডিফাইর মাধ্যমে পণ্য চালানটি পোস্ট এন্ট্রি করা হয়। আর আমদানিকারককে মিথ্যা ঘোষণা থেকে বাঁচাতে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ না এনেই পুনঃশুল্কায়ন করা হয়। এতে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলেও কাস্টম হাউসকে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।’
শুল্ক গোয়েন্দা থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশনার কর্তৃক ন্যায়-নির্ণয় প্রক্রিয়া শেষে আমদানিকারক শুল্ক গোয়েন্দা বরাবর অনাপত্তির জন্য আবেদন করে। এই আবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিল অব এন্ট্রিটি লক থাকার পরও ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে একটি আইডি থেকে ফোর্স মডিফাইর মাধ্যমে পোস্ট এন্ট্রি করে শুল্কায়নের মূল্য বাড়ানো হয়েছে, যা কাস্টমস আইনের ৩২ ধারায় মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা কমাতেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড করা হয়েছে। শুল্ক কর্মকর্তার সহায়তায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফের যোগসাজশে প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি প্রমাণিত বলে মনে করে শুল্ক গোয়েন্দা। সরকারের শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পোস্ট এন্ট্রির কারণে উচ্চমাত্রার রাজস্ব ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর যে শুল্ক কর্মকর্তা এই পণ্য চালানটি পোস্ট এন্ট্রি করেছেন এবং কোন পরিপ্রেক্ষিতে করেছেন, তা জানতে চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমোদন নিয়েছেন কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলিনা অটো বাইক ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা আরিফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘পণ্য চালানে ভুল করে কিছু পণ্য বেশি এসেছিল। আমরা এসব পণ্যের শুল্ক-কর পরিশোধ করেছি।’
প্রতিষ্ঠানের মালিক কবির হোসেন দেশের বাইরে থাকায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানান আরিফ হোসেন।