ফেনীর প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়াগোধা গ্রামের চাঁদগাজী ভূঞা জামে মসজিদ। মসজিদের দেয়ালে লেখা নির্মাণ সাল অনুযায়ী এ স্থাপত্যের বয়স ৪০০ বছরের বেশি। মোগল আমলে চাঁদগাজী ভূঞা নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রাচীন এ মসজিদে এখনো নিয়মিত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদটির এক সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজটি আকারে বড়। গম্বুজের ওপরে পাতা ও বিভিন্ন নয়নাভিরাম নকশা রয়েছে। দরজার ওপরে রয়েছে টেরাকোটার নকশা। মসজিদের সামনের অংশে শ্বেতপাথরের নামফলকে ফারসি ও আরবি ভাষায় নানা বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্মাণকাল ১১২ হিজরি লিখে শেষে একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট ও উচ্চতা ৩৫ ফুট। চারপাশের দেয়াল চার ফুট পুরু। ২৮ শতক জায়গার ওপর চুন, সুড়কি ও ক্ষুদ্র ইট দিয়ে মসজিদটি তৈরি। ছাদে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ এবং চারকোনায় ও মাঝেমধ্যে রয়েছে উঁচু ও সরু আকারের আরও কয়েকটি গম্বুজ।
প্রাচীন এ মসজিদের চারপাশের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুনিপুণ কারুকার্য। মূল প্রবেশদ্বার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে মসজিদে ঢোকার সময় মাথা নিচু করতে হয়। দরজার দক্ষিণ পাশে রয়েছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। এক সময়ে সেখানে উঠে পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভূঞার কবর।
হাফেজ জাবের নামে চাঁদগাজী ভূঞার এক বংশধর বলেন, মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। এটির সংস্কার জরুরি। সর্বশেষ ১৯৯৩-৯৪ সালে এটি সংস্কার করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের গেজেটভুক্ত হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সংস্কারের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
জামসেদ আলম নামে আরেক বংশধর বলেন, এখানে হিজরি এক হাজার বছর পর তারিখ লেখার সময় এক হাজার অঙ্কটি না লিখে শুধুমাত্র অবশিষ্ট সংখ্যা লেখা হয়েছে। অর্থাৎ, ১১২২ সালের জায়গায় ১২২ সাল লেখা হয়েছে। এ নিয়মটি সৌদি আরবে হিজরি তারিখ লেখার ক্ষেত্রে চালু রয়েছে।
তিনি বলেন, মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন মানুষ; কিন্তু এখানের সড়কের বেহাল দশা। মসজিদ ও সড়কটির সংস্কার জরুরি। মসজিদের দেয়াল, গম্বুজ ও ছাদ শ্যাওলা ধরে কালো হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখানে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। সরকারিভাবে যদি মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেম নিয়োগসহ নানা বিষয়ে নজর দেওয়া হয়, তাহলেই ঐতিহাসিক এ স্থাপত্যটি রক্ষা পাবে।