শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১০:১৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মশক নিধনে ১২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন
মশক নিধনে ১২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর শতকোটি টাকা খরচ করলেও মশক নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখাতে পারেনি। মশক নিধনে নতুন নতুন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মুখে প্রতিবছরই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে কাউকে কখনো জবাবদিহির মুখোমুখিও হতে হয়নি। নগরবাসীর অভিযোগ, লোক দেখানো কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবছর মশা মারার নামে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। এবার ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের একটি পূর্বাভাস মডেল তৈরি ও মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ‘ইমপ্রুভমেট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেনটিভস সার্ভিসেস প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অনুমোদনের পর এ বছরই প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ঢাকার কাছের দুটি পৌরসভা সাভার ও তারাবতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পে ১ হাজার ৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দাতা সংস্থাটির একটি টেকনিক্যাল মিশন এইড-মেমোয়ার তৈরির কাজ করছে। এলজিডি সচিবের সভাপতিত্বে চলতি বছরের ২৩ মে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার ওপর গবেষণার পাশাপাশি মশাবাহিত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবনের বিষয়ও রয়েছে প্রকল্পে। নিয়মিত জরিপের মাধ্যমে কোনো এলাকায় মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির ঝুঁকি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে, যার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে পারবে।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, এডিস মশা শনাক্তে ঢাকা মশা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে একটি সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ইউনিট (ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট ইউনিট) এবং একটি কেন্দ্রীয় জৈবিক (পতঙ্গবিজ্ঞান) ল্যাবরেটরি স্থাপন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। রোগ বিস্তারকারী কীটপতঙ্গের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া হবে-আইভিএমইউ। ফলে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ হ্রাস বা বিস্তার রোধের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যাবে। এ ধরনের ইউনিটে সাধারণত পতঙ্গবিদ, রোগতত্ত্ববিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সামাজিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা থাকেন।

মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করা হবে। পাশাপাশি সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অধীনে কার্যকরভাবে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইডের মতো কীটনাশক এবং স্প্রে ও ফগিংয়ের মাধ্যমে তা ছড়ানোর যন্ত্রপাতিও কেনা হবে। এ ছাড়া বাসাবাড়ির মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরির লক্ষ্যও রয়েছে প্রকল্পটির। এ ধরনের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বা চুক্তির ভিত্তিতে যা বাস্তবায়িত হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ুর সঙ্গে ডেঙ্গু বিস্তারের সম্পর্ক আছে। ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট উদ্যোগের সঙ্গে আবহাওয়া অফিসের সম্পৃক্ততা থাকলে মশাবাহিত রোগ বাড়বে কি না, তার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। আবহাওয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি মডেল তৈরি ও তা কার্যকর করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ ছাড়া ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের অধীনে বছরব্যাপী মশক জরিপ পরিচালনা করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা জৈবিক পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু শনাক্তে একটি রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ-পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন যন্ত্র স্থাপন করবে এলজিডি। ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য এডিস ইজিপ্টির মতো বিভিন্ন রোগবাহক মশাকে জীবন্ত রাখতে একটি পতাঙ্গাগার বা ইনসেক্টেরিয়াম নির্মাণ করা হবে। এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির স্ত্রী এডিস মশা মানুষের দেহে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ছড়ায়।

জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে উন্মুক্ত ময়দান, খেলার মাঠ, পার্ক, ফুটপাথকে হাঁটাচলা, ব্যায়াম ও বিনোদনের স্থান হিসেবে রূপান্তরিত করতে সহায়তা দেবে এ প্রকল্প। খাদ্যের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিতে ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিসহ গড়ে তোলা হবে জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগার। এ ছাড়া বায়ু ও শব্দদূষণসংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিরসনের উদ্দেশ্যেও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকবে। একই সঙ্গে মানব শরীরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কেও সামাজিক প্রচারণা চালানো হবে।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার কালবেলাকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা একটি ভালো উদ্যোগ। শুরুতে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য কীটতত্ত্ববিদদের প্রকল্পে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিলে সফলতা আসবে। নইলে এটি কোনো কার্যকরী উদ্যোগ হবে না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক ডা. মো. সারোয়ার বারী কালবেলাকে বলেন, প্রকল্পটি মূলত দুটি ভাগে বাস্তবায়ন হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি অংশ বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ অংশে মশক নিধনের যাবতীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনগুলো বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে থাকবে। প্রকল্পে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আরেকটি অংশ বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অংশের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১০

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১১

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১২

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৩

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৪

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৫

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৬

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৭

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৮

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৯

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

২০
X