বয়সের কারণে পা কিংবা কোমরের ব্যথা নিয়ে যাদের বসবাস, তাদের কাছে সায়াটিকা পরিচিত শব্দ। রোগটি বাতজনিত না স্নায়ুজনিত তা নিয়ে অনেকে দ্বিধায় থাকেন। আমাদের শরীরে সায়াটিক নার্ভ নামে একটি দীর্ঘ স্নায়ু আছে। এটি স্পাইনাল কর্ড থেকে মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে ঊরুর পেছনের দিক দিয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। কোনো কারণে এ স্নায়ুতে চাপ পড়লে কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। তখন একে সায়াটিকা বলে।
পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ সায়াটিকা ব্যথায় ভুগে থাকেন। পুরুষ বা নারীর যে কেউ সাধারণত ৩০-৬০ বছরের মধ্যে এ রোগে ভোগেন।
কারণ
মেরুদণ্ডের কোমরের অংশের ডিস্ক বা নরম হাড় স্থানচ্যুত হয়ে স্নায়ুতে চাপ পড়া।
কশেরুকার স্থানচ্যুতি।
স্নায়ু চলাচলের পথ সরু হলে।
বয়সজনিত ক্ষয়রোগ।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করলে।
হঠাৎ ভারী বস্তু ওঠানো।
সামনে ঝুঁকে বা বসে কাজ করা।
দীর্ঘক্ষণ মোটরসাইকেল, সাইকেল চালানো।
স্নায়ুরোগ, স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপড ডিস্ক এবং পেশির খিঁচুনি ইত্যাদি।
লক্ষণ
পিঠের নিচের অংশে, ঊরুর, পায়ের পেছনে ব্যথা হবে।
কোমরের নিচের দিকে এবং এক পাশে ব্যথা হবে।
ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। ঊরুর দিকে বেশি অনুভূত হবে।
পায়ে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হবে। একটা পা অথবা পায়ের পাতায় ঘন ঘন অসাড়তা এবং এক পায়ে দুর্বলতা অনুভূত হবে।
সুচ ফোটানোর মতো তীব্র ব্যথা হবে।
পা বা পায়ের পাতা নড়াচড়ায়, দাঁড়িয়ে থাকতে ও হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়।
শুলে ব্যথা বাড়বে। কিছুক্ষণ হাঁটলে ব্যথা কমবে। বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়বে।
পরীক্ষা
ইমেজিং পরীক্ষা, এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান ইলেকট্রোমোগ্রাফি করে সায়াটিকা শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
যদি চার-ছয় সপ্তাহের মধ্যে সায়াটিকা নিজে থেকে ঠিক না হয়, তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। উপসর্গ অনুসারে ওষুধ, ইনজেকশন, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচার, ব্যায়াম ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের ফলে সায়াটিকা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও রয়েছে।
করণীয় ও বর্জনীয়
বেশি নরম বিছানায় ঘুম, কোমর বাঁকা করে কোনো কাজ না করা।
সামনে ঝুঁকে কাজ করা বা নিচ থেকে কিছু না তোলা।
যতটা সম্ভব হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে হবে। হাইকমোড ব্যবহার করতে হবে।
বিছানা থেকে ওঠার সময় একপাশে কাত হয়ে হাতে ভর দিয়ে উঠতে হবে।
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কোনো কাজ করা যাবে না। সোজা হয়ে বসে কাজ করতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শমতো গরম সেঁক দেওয়া যাবে।
টানা অনেকক্ষণ বসে থাকা যাবে না।
উঁচু-নিচু স্থানে ভ্রমণে কোমরে বিশেষ বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
লেখক : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার, ঢাকা
মন্তব্য করুন