শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আলোচনায় ছিল আন্দোলনের নতুন নতুন টার্ম ও শব্দ

আলোচনায় ছিল আন্দোলনের নতুন নতুন টার্ম ও শব্দ
ছবি: সংগৃহিত

৫ আগস্টের আগে যা কেউ কল্পনায়ও ভাবেনি ২৪-এ ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে সেই ভাবনাতীত বিষয়কে বাস্তবে রূপান্তর করেছে। অবসান ঘটেছে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের। ৫ আগস্ট দুপুরে সব পথ মিলিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে। লাখো ছাত্র-জনতার প্রবল ঢেউ আর হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তস্রোত ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে প্রচণ্ড প্রতাপশালী এক শাসকের দম্ভের ভিত। আর এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সৃজনশীল কর্মসূচি আর স্লোগানে নতুনত্ব। শাসকের মসনদে কাঁপন ধরানো একেকটি স্লোগান যেন হয়ে উঠেছিল দেশের কেন্দ্র থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ের কথা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন, লংমার্চ, হরতাল, ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেখে আসছেন সাধারণ মানুষ। তবে একের পর এক ভিন্নতর কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন পায় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন।

জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মাঠে নামেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুরুর দিকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং এবং সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর ১৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা নিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। একই সঙ্গে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর ওই স্মারকলিপি দেন। এরপর ১৬ জুলাই সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টাপাল্টি হামলা ও গুলিবর্ষণে ওই দিনই নিহত হন ৬ জন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা নাড়া ফেলে দেয় দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আমজনতার মধ্যে। এমন অবস্থায় ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নামে নুতন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ কর্মসূচি ঘোষণার সময় বলেন, শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। এর পরের কয়েক দিনে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দেশব্যাপী সহিংসতায় বিপুল হতাহত হয়। পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে দেশের বাইরেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এক পর্যায়ে গত ৩১ জুলাই ঘোষণা করা হয় পরের দিন পালিত হবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। এই কর্মসূচি মোতাবেক সারা দেশে গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম-খুনের প্রতিবাদে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে, ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর ১ আগস্ট ঘোষণা করা হয় রিমেম্বারিং আওয়ার হিরো’স কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আলোকে সারা দেশে নিহতদের স্মরণ এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হয়। ২ আগস্ট ঘোষণা করা হয় প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল। এরপর ৪ আগস্ট টানা দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট সকালে সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শাহাদাতবরণ করার স্থানগুলোয় ‘শহীদ স্মৃতিফলক’ উন্মোচন করা হবে। একই দিন বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে শ্রমিক সমাবেশ এবং বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি এক দফা দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালন করা হবে। সব এলাকায়, পাড়ায়, গ্রামে, উপজেলা, জেলায় ছাত্রদের নেতৃত্বে ‘সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদেরকে গুম, গ্রেপ্তার, খুনও করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ নাও থাকে একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।’ যদিও সেই কর্মসূচি পরিবর্তন করা হয় কিছুক্ষণ পরেই। ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা করা হয়। সমন্বয়করা সেদিন ফেসবুকে লেখেন, পরশু নয় কালই লংমার্চ টু ঢাকা।

আন্দোলনে সৃজনশীল স্লোগান: ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নতুন মাত্রা পায় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন। আবু সাঈদ নিহতের পরে শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল, ‘আমার খায় আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে;’ ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে;’ সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানাভাবে সংলাপের চেষ্টা করা হয়। তবে সরকারে দাবি নাকচ করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘বন্দুকের নলের সঙ্গে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না;’ ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে।’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলনে যোগ দিলে এর নতুন গতি পায়। গত ২ আগস্ট, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেক বার; যে হাত গুলি করে সে হাত ভেঙে দাও।’ ২ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটি স্লোগান ব্যাপক ভাইরাল হয়। যেটি ছিল—আর ন হাঁইয়্যে, বৌতদিন হাঁইয়্য। ৩ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; গুলি করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজসহ আশপাশের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আন্দোলন করেন। সেখানে স্লোগান দিতে দেখা যায়, জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টি; দিয়েছি যে রক্ত আরও দেব রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দেয় দেশের স্কুলশিক্ষার্থীরাও। স্কুলশিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশে বাধা দিতে গেলে সেখানে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়, কে এসেছে কে এসেছে, পুলিশ এসেছে পুলিশ এসেছে; কি করছে কি করছে, স্বৈরাচারের পা চাটছে। ৩ আগস্ট রাজধানীতে আন্দোলনে যোগ দেয় রিকশাচালকদের একটি দল। সেখানে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়, ছাত্র ভাইদের বুকে গুলি কেন, প্রশাসন জবাব চাই; গুলি করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না; শেখ হাসিনার গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে।’

স্লোগানের পাশাপাশি আলোচনার চিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা। এর মধ্যে কিছু আলোচিত প্ল্যাকার্ড ছিল—চেয়ে দেখ এই চোখের আগুন, এই ফাগুনেই আমরা হব দ্বিগুণ; অনাস্থা অনাস্থা, স্বৈরতন্ত্রে অনাস্থা; তবে তাই হোক বেশ, জনগণই দেখে নিক এর শেষ; আমরা আম জনতা কম বুঝি ক্ষমতা; উই ওয়ান্ট জাস্টিস; হাল ছেড়ো না বন্ধু, কণ্ঠ ছাড়ো জোড়ে; ফাইট ফর ইউর রাইটস; নিউটন বোমা বোঝো মানুষ বোঝো না; যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ; বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর; দফা এক দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১০

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

১১

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

১২

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১৩

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

১৪

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

১৫

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

১৬

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১৭

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১৮

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১৯

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

২০
X