শিশুশিল্পী থেকে মডেল, তারপর পড়াশোনার বিরতি। ফিরে এসে একের পর এক জনপ্রিয় নাটকে উপস্থিতি। স্বপ্ন শুধু ছোটপর্দায় থামবে না—বড় পর্দার দোরগোড়াতেও কড়া নাড়ছেন মাফতুহা জান্নাত জিম।
রাতের পড়া শেষ হলেই যখন বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী ঘুমোনোর প্রস্তুতি নেন, জিম তখন ব্যাগে গুছিয়ে রাখেন নাটকের স্ক্রিপ্ট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে ছুটে যান শুটিং ফ্লোরে। পড়াশোনার চাপ কমেনি, তবু থামেননি তিনি। কারণ স্বপ্ন—সময় কম, তবু কাজ থামানো যাবে না।
শুরুটা ছিল শিশুশিল্পী হিসেবে। মাঝখানে মডেলিং, বিজ্ঞাপনে কাজ। তারপর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, অ্যাডমিশন টেস্টের বিরতি। সেই বিরতিই তাকে শিখিয়েছে কীভাবে লক্ষ্য আঁকড়ে ধরা যায়। পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের জায়গা করে আবারও ফিরে আসা নিজের চেনা জগতে। আর সেই ফিরে আসাই তাকে নিয়ে গেছে একের পর এক জনপ্রিয় কাজের কাছে। কেন জগন্নাথ? জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলায় সুযোগ পাওয়ার পরও অভিনয়ের টানে তিনি বেছে নিয়েছেন জগন্নাথের নাট্যকলা বিভাগ। অভিনয় সম্পর্কে পুথিগত বিদ্যার আলোকে শিখে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতেই এই বিভাগ বেছে নিয়েছেন।
কাজে ফেরার পর কাজের তালিকা দ্রুতই লম্বা হয়েছে। শুরুতে বাবু সিদ্দিকির ‘সিক্রেট গার্লফ্রেন্ড’ নাটকে অভিনয়ের পর থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি নিজেকে স্বপ্ন চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য। তারপর মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত ‘প্রথম হারালো মন’ দিয়ে আরশের সঙ্গে প্রথম একক নাটকে পদার্পণ। জানা যায় সিরিয়ালেও ছুটছেন তিনি।
মাবরুর রশিদ বান্নাহর পরিচালনায় যত্ন দিয়ে আরশ খানের সঙ্গে প্রথম জুটি, এরপর একই জুটিতে সকাল আহমেদের ‘দোষটা কার’ এবং আরও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন এই জুটি। সব নাটকেই আরশের সঙ্গে ক্যামিস্ট্রি দর্শকদের নজর কেড়েছে।
তারকাখ্যাতির এ পথে তিনি নিজেকে বলেন, ‘ধীরগতির দৌড়বিদ’। সেই চেনা প্রবাদই যেন তার মন্ত্র ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস’। দ্রুততার যে চাপ ইন্ডাস্ট্রিতে থাকে, তার মাঝেই তিনি বেছে নিয়েছেন শৃঙ্খলাকে। বাড়ির পড়ার টেবিল, ডেডলাইন, শুটিং—সব মিলিয়েই তার দিন।
সাম্প্রতিকতম ব্যস্ততার নাম সকাল আহমেদের পরিচালনায় ‘দোষটা কার’ নাটকটি আরশের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম কিস্তি পেয়েছিল দর্শকসাড়া, যা এক কোটি ভক্তদের হৃদয় ছুঁয়েছে, তাই আসছে পার্ট টু। দর্শকদের চাহিদার তালিকায় এর মধ্যে আছে ‘প্রথম হারালো মন’, ‘যত্ন’, ‘প্রিয় ফুল তুমি’, ‘বুনোফুল’, ‘বন্ধু তুই আমার’, ‘শেকড়ের টানে’, ‘মেঘবালিক’, ‘প্রেম তোমাকে অভিনন্দন’। ছোট পর্দার এই সাফল্য তাকে থামিয়ে রাখছে না। থিয়েটারের রিহার্সাল রুম থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনের বড় ক্যানভাস—সবখানেই নিজেকে কল্পনা করেন জিম। তার অপেক্ষা এখন ভালো গল্পের; পেলেই ঝাঁপ দেবেন সেলুলয়েডে।
শেষে নিজের কথাতেই ফিরে যাওয়া যাক ‘নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’ ধীর লয়ে শুরু হলেও তার স্প্রিন্ট অনেক দূর যাবে—এটা এখন আর শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের ভেতরেই তার প্রমাণ রেখে চলেছেন মাফতুহা জান্নাত জিম।
মন্তব্য করুন