চলচ্চিত্রের সরকারি অনুদান নিয়ে নানা সময়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চেকপ্রাপ্তির পর নির্ধারিত ৯ মাসের সময়সীমায় কেন পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ সম্পন্ন হয় না, সেই প্রশ্নও চাউর হয়। বিগত অর্থবছরেও বেশ কিছু সিনেমা রয়েছে, যেগুলোর দৃশ্যধারণ শেষ হয়নি এখনো। তাই ২০২২-২৩ অর্থবছরে যারা অনুদান পেলেন, কী ভাবছেন তারা সিনেমা নির্মাণে—সেই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন রাব্বানী রাব্বি।
অনেক নির্মাতাই রয়েছেন যারা সরকারি অনুদান নিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। কেউ সিনেমা শেষই করতে পারছেন না, কেউ আবার সিনেমা শেষ করলেও সেটির মুক্তি আটকে আছে নানা কারণে। অথচ সরকারি অনুদানের জন্য প্রধান শর্ত থাকে, অনুদানের প্রথম চেক পাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে ছবির কাজ শেষ করতে হবে। তবে বিশেষ অবস্থায় অনুরোধ সাপেক্ষে পরিচালক এই সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে নির্মাণের জন্য বছরের পর বছর সময় পার করছেন। এ অভিযোগে বেশ কয়েকজন নির্মাতার নামে মামলাও হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। মোট ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিচালক-প্রযোজক হিসেবে প্রথমবার অনুদান পেয়েছেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। ‘রেনুর মুক্তিযুদ্ধ’ নামে সিনেমাটির জন্য তিনি পেয়েছেন ষাট লাখ টাকা। সিনেমাটি কী নিয়ে, সেই বিস্তারিত শিগগিরই জানাবেন তিনি। এছাড়া বললেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই অনুদান পেয়েছি। সরকার আমাকে সম্মানিত করেছে, এটা আমার জন্য ভীষণ আনন্দের। চেষ্টা করব সততার সঙ্গে ৯ মাসের মধ্যেই সিনেমাটি শেষ করতে।’
প্রযোজক হিসেবে প্রথমবার অনুদান পেয়েছেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। ‘লারা’ নামে তার সিনেমাটি পরিচালনা করবেন শেখর দাশ। সিনেমাটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যোতি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত জানাব। আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সম্মান্নিত জুরিদের যারা আমার গল্পটি আন্তরিকভাবে যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত করেছেন।’
সরকারি অনুদানে ‘নোনাজলের কাব্য’ নির্মাণ করেছিলেন প্রযোজক ও পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। এবার তিনি অনুদান পেয়েছেন ‘মাস্টার’ ছবির জন্য। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন উপজেলা অঞ্চলের একজন কলেজ শিক্ষক। ছাত্র কিংবা এলাকার মানুষজনের কাছে খুবই জনপ্রিয় তিনি। সেই হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান। কিন্তু নানা ধরনের বাধার মুখে পড়েন। কাছের মানুষজনও ধীরে ধীরে তার থেকে সরে যেতে থাকেন। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ব্যবস্থার কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন সেই কলেজ শিক্ষক। এমনই গল্পে এগিয়েছে ‘মাস্টার’ সিনেমার কাহিনি।
কোন ভাবনা থেকে লেখা—এমন প্রশ্নে সুমিত বলেন, ‘শহর থেকে প্রান্তিক মানুষজনের জন্য নানা ধরনের প্রজেক্ট নেওয়া হয়। কিন্তু সেই মানুষগুলোর জীবনে উল্লেখযোগ্য কোনো বদল আসে না। প্রজেক্টের সুফল প্রান্তিক মানুষেরা পান না। কারণ, মাঝখানে যারা থাকে তারাই একটা বড় অংশ নিজেদের কুক্ষিগত করে ফেলেন। এই ব্যাপারগুলো আমাকে নাড়া দেয়, যে কারণে মনে হলো ফিচার ফিল্মের মাধ্যমে সেই বিষয়গুলো আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব।’
সরকারি অনুদানে সিনেমা নির্মাণে ৯ মাসের প্রসঙ্গ উঠলে সুমিত বলেন, ‘এটা চরম সত্য যে অনুদানের টাকা নিয়ে কেউ কেউ টালবাহানা করেন। এমন প্রকল্পও আছে যেগুলো শেষ পর্যন্ত সিনেমা হিসেবেই আলোর মুখ দেখে না। আবার যোগ্য মানুষটি এই অনুদান পেল কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে বিভিন্ন সময়। এই বিষয়গুলো নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আবারও ভাবতে হবে। আর আমার ‘মাস্টার’ সিনেমাটি ৯ মাসে শেষ করতে পারব কিনা, জানি না। তবে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
এদিকে, প্রথমবারের মতো সরকারি অনুদান পেয়েছেন সংগীতশিল্পী-নির্মাতা এসডি রুবেল। ‘নীল আকাশে পাখি উড়ে’ নির্মাণের জন্য এই অনুদান পেলেন তিনি। সিনেমাটি নির্মিত হবে তারই লেখা একই শিরোনামের উপন্যাস অবলম্বনে।
৯ মাসে কাজটি করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে এসডি রুবেল বললেন, ‘‘অবশ্যই সম্ভব। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি।’
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি প্রথমবারের মতো অনুদান পেয়েছেন এবার। তিনি নির্মাণ করবেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাটির রাজকুমার’। বললেন, ‘যেহেতু সরকারি অনুদানে সিনেমা নির্মাণে ৯ মাসের বিধিবিধান রয়েছে, সেই হিসেবেই সিনেমাটির পরিকল্পনা করেছি। এখন দেখা যাক।’
মাতিয়া বানু শুকু পেয়েছেন ‘লাল মিয়া’ ছবির জন্য অনুদান। পরিচালনা করবেন নুরুল আলম আতিক। এর আগে এই জুটি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। আতিক বললেন, ‘এই সময়ে সিনেমা নির্মাণ অবশ্যই সম্ভব। তবে সিনেমা করা মানে অনেক আয়োজনের কাজ। তাই কখনো কখনো এই ৯ মাসের বেশিও লাগে। তবে অনেকে এই টাকা-পয়সার অপব্যবহার করেন, যা দুঃখজনক।’
মন্তব্য করুন