চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ৪৩ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এসব পণ্য রপ্তানিতে ১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সব ধরনের পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়োজিত ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ডব্লিউটিও’র নিয়ম অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে, ওই সময় একসাথে পুরো রপ্তানি প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে- এমন বিবেচনায় বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে আগে যে সার্কুলার জারি করেছিল তা প্রত্যাহার করে নতুন সার্কুলার জারি করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
আগে যে ৮ খাতে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল এখন থেকে সেগুলোতে ১৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হবে। সেই হিসাবে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এসব পণ্যের মধ্যে শাকসবজি, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত; বৈচিত্র্যকৃত পাটপণ্য, শতভাগ হালাল মাংসে ও হালাল মাংসজাতীয় পণ্য, আলু, পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন ও জুট পার্টিকেল বোর্ডে ১৫ শতাংশ হারে এবং অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) রপ্তানি, শস্য ও শাকসবজির বীজ, আগর ও আতর পণ্য রপ্তানি খাতে ১০ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল ৬ খাতের পণ্য রপ্তানিতে। এসব খাতে এখন থেকে তিনটি খাতে ১২ শতাংশ, দুটি খাতে ১০ শতাংশ এবং একটি খাতে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এর মধ্যে হালকা প্রকৌশল পণ্য; চামড়াজাত দ্রব্য; অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি খাতে ১২ শতাংশ এবং আসবাবপত্র; সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা ও ব্যাগ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং চাল রপ্তানিতে ৫ শতাংশ রপ্তানি সহায়তা দেওয়া হবে।
১২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল একটি খাতে। সেটি হলো পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য রপ্তানি খাত তথা হেসিয়ান, স্যাকিং ও সিবিসি রপ্তানিতে। এখন সেটিতে দেওয়া হবে ৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল বেশ কয়েকটি খাতে। এর মধ্যে রয়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বরফ আচ্ছাদিত হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি খাত ও টুপি রপ্তানিতে ৯ শতাংশ; প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য, সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যার, জাহাজ রপ্তানি, ওষুধ পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য (হোগলা, খড়, আখের/নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা/খোল, তৈরি পোশাকের ঝুট কাপড় থেকে); গরু ও মহিষের নাড়িভুঁড়ি, শিং; পেট বোতল-ফ্লেক্স; পেট বোতল-ফ্লেক্স থেকে উৎপাদিত পলিয়েস্টার স্টাপল, ফটোভোলাটিক মডিউল রপ্তানি, মোটরসাইকেল, রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিক পণ্য, টুপি, কাঁকড়া ও কুঁচে, গ্যালভানাইজ শিট; ভোক্তা ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক হোম ও কিচেন পণ্য রপ্তানি খাতে ৮ শতাংশ এবং কেমিক্যাল পণ্যের ক্লোরিন ও হাইড্রোক্লোরিনে; সাভারে চামড়াশিল্প নগরে অবস্থিত কারখানা ও সাভারের বাইরে অবস্থিত কারখানায় যেখানে নিজস্ব ইটিপি রয়েছে, এমন কারখানায় উৎপাদিত ফিনিশড চামড়া খাতে ৭ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া হবে। যদিও ক্রাস্ট চামড়া খাতে এবং কস্টিক সোডা এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে এই প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর বাইরে রপ্তানিমুখী, দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ওডিউটি ড্র ব্যাক-এর পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ও রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের (নিট, ওভেন ও সোয়েটার) অন্তর্ভুক্ত সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন পণ্য বা নতুন বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ হারে সহায়তা দেওয়া হবে।
আগে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে পণ্য পাঠালে নগদ সহায়তা দেওয়া হতো না। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যও। কারণ, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেছে। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা খাতে ২ শতাংশের পরিবর্তে এক শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া হবে। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা এক শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ৫০ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা দেওয়া হবে। নগদ সহায়তার হার কম হলেও রপ্তানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি রপ্তানি ভর্তুকি বেশি পাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত।
মন্তব্য করুন