কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে নৈরাজ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় কারফিউ জারি হলে স্থবির হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অবস্থিত শিল্প কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবসা পরিস্থিতি। নৈরাজ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় বুধবার সকাল থেকে চালু হয়েছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। কিন্তু শ্রমিক সংকটে থাকায় শিল্প কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড খোলা থাকলেও পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, সীতাকুণ্ডে ছোট বড় প্রায় ১৫০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অর্ধশত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। শিল্প কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মিলে সর্বমোট প্রায় দেড় লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ শ্রমিক বাড়ি চলে গেছে। যে কারণে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকপক্ষ বলছেন পুরোপুরি চালু হবে আগামী শনিবার থেকে।
সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলসের কারখানা পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন ও দেশব্যাপী নৈরাজ্য পরিস্থিতির কারণে উৎপাদিত রড কারখানা থেকে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও সম্ভব হয়নি নতুন করে কারখানায় রড তৈরি করার জন্য ক্রয় করার। বুধবার থেকে পুরোপুরি কারখানা চালু হলেও যথেষ্ট শ্রমিক সংকটে রয়েছে।
আবুল খায়ের স্টিল মিলস্ এর ম্যানেজার (এডমিন) ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, পুরোপুরি চালু হয়েছে কারখানা। বন্ধুর থেকে আসতে শুরু করেছে রড তৈরির কাঁচামাল। দেশের নৈরাজ্য পরিস্থিতির কারণে কারখানার কত টাকা ক্ষতি হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
মাদার স্টিল লিমিটেডের এমডি মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, দেশে নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে আমার ইয়ার্ডে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। দেশের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে অনেকে শ্রমিক বাড়িতে চলে গেছে। তারা এখনো বাড়ি থেকে ফিরে আসেননি। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গুলো পুরোপুরি চালু হবে আগামী শনিবার থেকে।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন ও দেশব্যাপী নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গত কয়েকদিনে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম বুধবার সকাল থেকে চালু হলেও শ্রমিক সংকটে থাকায় পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমরা চাই দেশের পরিস্থিতি সব সময় শান্ত থাকুক। অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকুক। সাধারণ মানুষ যেন নির্ভয়ে কর্মমুখী হতে পারে।
কেডিএস লজিস্টিক লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ডিপোর কাজগুলো প্রায় ইন্টারনেট সম্পৃক্ত। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল ডিপোর কার্যক্রম। কিন্তু কিছু কিছু কাজ এনালগ পদ্ধতিতে চলেছিল। বুধবার থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ায় পুরো দমে চলছে এক্সপোর্ট ইমপোর্টের কাজ।
চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ সোলায়মান কালবেলাকে বলেন, পুরোপুরি চালু হয়েছে শিল্প কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। সীতাকুণ্ড এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৫০ জন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
মন্তব্য করুন