কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের লোহাগাড়া। এখনো পানির নিচে কৃষকের সিংহভাগ ক্ষেতখামার। উপজেলায় প্রায় ২ হাজার মাটির বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে খালের পাড় ও রাস্তা। ডুবে গেছে পুকুরসহ মাছের ও পোল্ট্রির খামার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহ্ন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া তথ্য মতে, আমিরাবাদে প্রায় ৫০০ মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের সিংহভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ডলু ও টংকাবতী খালে প্রায় ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় ২ শতাধিক পুকুর ও মাছের খামার এবং ১০টি পোল্ট্রি খামার পানিতে ডুবে গেছে।
চুনতিতে প্রায় সাড়ে ৫শ মাটির বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ৫০ স্থানে রাস্তা ও খালের পাড় ভেঙে গেছে। প্রায় দেড়শ পুকুর ও মাছের খামার এবং ১০টি পোল্ট্রি খামার পানিতে ডুবে গেছে। সদর ইউনিয়নে প্রায় ৩ মাটির বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের সুখছড়ি খালের ৪ স্থানেসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে। শতাধিক পুকুর ও মাছের খামার ডুবে গেছে।
আধুনগরে প্রায় ২শ মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের ডলু ও হাতিরখালের পাড়সহ সড়কের শতাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় ৩ শতাধিক পুকুর ও মাছের খামার এবং ৮টি পোল্ট্রি খামার পানিতে ডুবে গেছে।
বড়হাতিয়ায় প্রায় শতাধিক মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ১২ স্থানে রাস্তা ও থমথমিয়া খালের পাড় ভেঙে গেছে। প্রায় শতাধিক পুকুর ও মাছের খামার ডুবে গেছে।
পুটিবিলায় প্রায় ৫০টি মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ১২ স্থানে রাস্তা ও ডলু খালের পাড় ভেঙে গেছে। মাছের খামারসহ প্রায় ১০টি পুকুর ডুবে গেছে। এ ছাড়া ডুবে গেছে ২টি পোল্ট্রি খামার।
এ ছাড়া বানের পানিতে ডুবে আধুনগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পদ্মাবিলে অবস্থিত থ্রি-স্টার মুড়ির মিলের সদ্য আনা প্রায় ২০ লাখ টাকার চাল এবং ১০ লাখ টাকার মতো ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।
মিল ম্যানেজার মাহামুদুর রহমান ভুট্টো জানান, বন্যায় আমার সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে গেছে। মিল চালাতে না পারার কারণে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্মানিও দিতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চরম্বায় প্রায় ৫০টি মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের টংকাবতী ও জামছড়িসহ সড়কের প্রায় অর্ধ শতাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পুকুরসহ প্রায় ৫শ মাছের খামার ও পোল্ট্রি খামার পানিতে ডুবে গেছে।
কলাউজানে প্রায় ৬০টি মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের টংকাবতী খাল ও সড়কের ২০ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পুকুরসহ প্রায় ২শ মাছের এবং পোল্ট্রি খামার পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া পদুয়া ইউনিয়নের বহু মাটির বসতঘর বিধ্বস্ত, খালের পাড় ও রাস্তা ভাঙন এবং পুকুরসহ মাছের খামার ডুবে যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া না পাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।
পুটিবিলার কৃষক আ স ম দিদারুল আলম জানান, তিনি ৪৫ শতক জমিতে মরিচ ও ১২ শতক জমিতে টমেটো চারা রোপণ করেছেন। এতে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সবেমাত্র গাছে মরিচ ধরা শুরু করেছে। বন্যার পানি সরে গেলেও গাছগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। এ ছাড়া টমেটো ক্ষেত এখনো পানির নিচে রয়েছে। বন্যায় তার ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
লোহাগাড়া সদরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের মালিক মো. সেলিম উদ্দিন জানান, জীবনে বন্যায় এত পানি হবে কল্পনা করিনি। পানিতে তার বাবার আমলের প্রায় ৬০ বছরের পুরাতন বসতঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।আর আমি একজন ক্ষুদ্র দোকানদার আমি যা আয় করি তাতে পরিবারের ভরণপোষণ বহন করাও কষ্ট হয়ে পড়ে।আমার পরিবারে আমি উপার্জন করার মতো কেউ। আমার পরিবারে দুই কন্যা সন্তান আছে। এমতাবস্থায় আমার নতুন ঘর করা অসম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী শফিউল ইসলাম জানান, বন্যার পানি সম্পূর্ণ সরে গেলে কৃষকের ক্ষেতের চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
এদিকে, পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামারের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
লোহাগাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন