চট্টগ্রামে খোলা নালায় পড়ে তিন বছরের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে শিশু মৃত্যুর জন্য শিশুটির পরিবারের ‘অসতর্কতাকেই’ মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনায় সংস্থাটির কোনো গাফলতি খুঁজে পায়নি কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে প্রতিবেদন জমা দেয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এর আগে গত বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে নগরীর আনন্দিপুর এলাকায় খেলতে গিয়ে খোলা ড্রেনে পড়ে যায় তিন বছরের হুমায়রা আক্তার। পরে ১৫০ ফুট দূরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরই এ ঘটনা তদন্তে রাতেই একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যে নালায় শিশুটি পড়ে মারা যায় সেটি একটি বেসরকারি গার্মেন্টস কারখানার। ফলে এটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত নয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে কোনো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল না এবং শিশুটির মা যেখানে ছিলেন, সে কর্মস্থলেও ছিল না শিশুর নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনার জন্য একাধিক কারণ দায়ী- মায়ের কর্মস্থলে নিরাপত্তা ঘাটতি, পরিবারের অসতর্কতা, কারখানার মূল গেট খোলা থাকা এবং কোনো নিরাপত্তারক্ষীর অনুপস্থিতি। প্রধান সড়ক ও গলির উচ্চতার পার্থক্য, কাঠামোগত অসামঞ্জস্যতাও দুর্ঘটনার সহায়ক হয়েছিল।
তবে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- কারখানায় শিশু নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, জলাবদ্ধতার সময় শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি নজরে রাখা, ঝুঁকিপূর্ণ নালা ঢেকে দেওয়া, নির্মাণে বিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা এবং আবাসিক এলাকায় কারখানা চালুর নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অসতর্কতা বড় কারণ। একজন মা কীভাবে এই প্রবল বৃষ্টির সময় মেয়েকে একা ছেড়ে দিলেন? এমন পরিস্থিতিতে মেয়ের প্রতি নজর রাখা উচিত ছিল মায়ের; কিন্তু তিনি তা করেননি। এ ছাড়া যে ভবনে শিশুর মা কাজ করেন, সেখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফটকও খোলা ছিল।
তিনি আরও বলেন, শিশুটি যে নালায় পড়ে মারা গেছে সেটা একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন নালা। সিটি করপোরেশনের নালা যেগুলো আছে সেগুলো স্লাব দিয়ে ঢাকা ছিল।
চট্টগ্রামে নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম না। গত ছয় বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ জন এবং চলতি বছর এ পর্যন্ত ২ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল হিজড়া খালে পড়ে ৬ মাস বয়সী সেহরিশের মৃত্যু হয়। সে সময়ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সে প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি।
মন্তব্য করুন