

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের নিশ্চিত তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর সুন্নি জোটের নেতারা। তারা বলেছেন, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক সংকট চলছে। এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কিংবা কোনো মহলের অপকৌশল বা ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন বানচাল হলে গোটা দেশকেই এর চরম মাশুল দিতে হবে, দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘি ময়দানে বৃহত্তর সুন্নি জোটের জনসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় তারা বলেন, এ মুহূর্তে বড় প্রয়োজন জনস্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। কিন্তু জাতীয় জনস্বার্থ ইস্যুতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য-বিভাজনই আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশবাসীর মাঝে যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে হবে। বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কিংবা কোনো মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে জনগণকে আবারও চরম মাশুল দিতে হবে। তখন দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
জনসভায় বৃহত্তর সুন্নি জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরাই থেকে গেল। দেশে কিছুই বদলায়নি। বরং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন খুন সন্ত্রাস আরও বেড়েছে। সরকারের কিন্তু উপদেষ্টার দলঘেঁষা পক্ষপাত মূলত আচরণ সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকার কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রসর না হয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে সব পদক্ষেপ নেবে— এটাই দেশবাসী দেখতে চায়।
জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদি বলেন, দেশে কোটি তরুণ যুবক আজ বেকার। দিন দিন বাড়ছে দারিয়া। এই সোয়া এক বছরে সারা দেশে শত শত মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও সরকারের এদিকে দৃষ্টি নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কবরের লাশও নিরাপদ নয়। কবর থেকে লাশ তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতেও কখনো দেখা যায়নি। দেশে যেন নব্য জাহেলিয়াত ফিরে এসেছে।
বৃহত্তর সুন্নি জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টর (বিএসপি) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, মানুষ আজ ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। গত ১৫ মাসে সারা দেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বহু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে মসজিদে হামলা, জোর করে ইমাম গরিবদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা এবং কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি বিচারালয়ের বিচারকরাও আজ নিরাপদ নন। তিনি বলেন, সুন্নি ছাত্র-জনতা কারও প্রতিপক্ষ নয়। এদেশে সুফিবাদীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধালে আমরা আর চুপ থাকব না।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবাইর বলেন, এ সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ১৫ মাসে দেশে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। দেশে এখন গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্যসহ ঘুষ-দুর্নীতির মচ্ছব চলছে।
বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সুযোগ নিতে পারে দেশবিরোধী অপশক্তি। তিনি সারা দেশে সুন্নি আলেম ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে হেনস্তা, চাপ প্রয়োগ এবং মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
বিএসপির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী মহসিন চৌধুরী বলেন, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের ঋণনির্ভরতা বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। অর্থনৈতিক চাপ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সরকারের প্রতি জনআস্থা কমছে।
জনসভায় ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনের আগে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা; পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ; চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা; আরাকানে মানবিক করিডোর না দেওয়া; মাজার-মসজিদে হামলাকারীদের বিচার এবং মাজার, খানকা, দরবার শরিফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বিএসপি চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি এস এম শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় বৃহত্তর সুন্নি জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন