কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের কারিগরি ত্রুটি সারানো হয়েছে। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে এ কাজ শেষ করা হয়। এরপরই শনিবার (২০ জানুয়ারি) ভোরে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ ফের শুরু করা হয়। কিন্তু এখনও চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ চালু হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, নগরীর হালিশহর, টাইগারপাস, খুলশী, আসকার দীঘির পাড়, জামাল খান, আন্দরকিল্লা, রাজা পুকুর লেন, রহমতগঞ্জ, দেওয়ানজী পুকুর পাড় ও জয়নগর এলাকায় গ্যাস সরবরাহ এখনও চালু হয়নি।
চট্টগ্রাম নগরীতে পাইপ লাইনে এখনও গ্যাস না থাকার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় সব এলাকায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ বাড়ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) গৌতম চন্দ্র কুন্ডু সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রকৌশলীরা ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের কারিগরি ত্রুটি সমাধান করেছেন। শনিবার সকালে টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। গ্যাসের চাপ এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ বাড়ছে এবং আমরা আশা করছি, আজ দুপুর নাগাদ বাসাবাড়ির চুলায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার দুপুর পর্যন্তও গ্যাস না পেয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেকে শুক্রবারের মতো লাকড়ি জোগাড় করে রান্নার কাজ করছেন। অপরদিকে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আজ গত দিনের চেয়ে তুলনামূলক খাবারে সহজে পাওয়া যাচ্ছে। বাসিন্দাদের অনেকে সেসব দোকান থেকে খাবার কিনে নিচ্ছেন।
এদিকে শহরের সড়কে যানবাহন কমে গেছে। সিএনজিচালিত অধিকাংশ যানবাহনে জ্বালানি রিফুয়েলিং করতে পারছেন না তারা। অনেকে যানবাহন নিয়ে পেট্রল পাম্পে লাইন ধরে আছেন। কেউ কেউ আশপাশে অবস্থান করে নিয়মিত খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে চট্টগ্রাম নগরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গ্যাস সরবরাহ। শুক্রবার সকাল থেকে লাইনে গ্যাস না পাওয়ায় বাড়ি, রেস্তোরাঁয় রান্না হয়নি খাবার। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের লক্ষাধিক মানুষ। বৈদ্যুতিক চুলা ও লাকড়ি জ্বালিয়ে যেসব রেস্তোরাঁ রান্নার কাজ সেরেছে, সেখানে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন, মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে সব খাবার। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আগে থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেনি। ফলে প্রস্তুতি না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের।
ওই দিন সারা শহরের গ্যাস সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান কালবেলাকে বলেছিলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি গত ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। এটি বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু চালু করা যায়নি। এ ছাড়া পেছনের গতি বা ব্যাক প্রেশার না থাকার কারণে সামিট এলএনজি টার্মিনালটিও গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামে কেজিডিসিএলের গ্রাহক সংযোগ ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। এসব খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ১ নভেম্বর থেকে কমবেশি ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছিল। এ কারণে সব ধরনের গ্রাহকই বিপাকে পড়েন।
কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন টার্মিনালটি চালু হলেও সংকট যাবে না। কারণ, সামিটের টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। দুটি সমানতালে চালু থাকলেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ আছে। দুটি টার্মিনাল মিলে দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো।
মন্তব্য করুন